"রহস্যে ঘেরা " পর্ব-০৯


রহস্যে ঘেরা
পর্ব: 09

এইদিকে এরিক তো মহা খুশি এত সহজে তার শিকারকে হাত করতে পেরে।
সে যতো কঠিন হবে ভেবেছিল তার চেয়ে অনেক সহজে আয়ানকে তুলে এনেছে। এখন তাকে একটা পাহাড়ের উপরে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়েছে। কারণ পাহাড়ের উপরেই তার শাস্তি দেওয়া হবে। আর পাহাড়ের নিচে দাঁড়িয়ে আছে হাজার হাজার ভ্যাম্পায়ার। তারা নিজ চোখে একজন মানুষের করুন মৃত্যু দেখতে চায়। ভ্যাম্পায়ার রাজা আর এরিক সামনে চলে এসে ঘোষণা দেয়,


-"আমার ছেলেকে খুন করেছে এই মানব। তাই আজ পুরো ভ্যাম্পায়ারবাসির সামনে তার করুন মৃত্যু হবে।"
এরপর এরিক বললো,
-"এই মানুষ আমার ভাইকে মেরেছে। তাই আমি এর শাস্তি আমাদের এখানে সবার সামনে দিবো। এর শরীরের সব রক্ত বের করে গোসল করবো আমরা। আর এর দেহ আমাদের রাক্ষসে ভ্যাম্পায়ারদের দিয়ে খাওয়াবো।"
ঘোষণা দেওয়ার সাথে সাথে সব ভ্যাম্পায়ার সমস্বরে উল্লাসের চিৎকার দিয়ে উঠলো।
এতক্ষণ একটা পাহাড়ের চূড়ার উপর একটা বিশাল খুটির সাথে বাঁধা ছিল আয়ান। সে সব শুনে যাচ্ছিলো শুধু। তার চেহারার কোন ভাবান্তর ছিল না। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল কিছুই হয়নি।
পুরো ভ্যাম্পায়ার সমাজ চিৎকার করে আয়ানের মৃত্যু কামনা করছিলো।
তাই এরিক আর তার বাবা দেরি করলো না। যতো দ্রুত সম্ভব তারা আয়ানের শাস্তির ব্যবস্থা করতে চায়।
যখনই রাজা তার পুত্র এরিককে নির্দেশ দেয় তার কাজ শুরু করার জন্য তখনই হঠাৎ করে একটা বাঁকা হাসি ফুটে ওঠে আয়ানের মুখে। নিষ্ঠুর সেই হাসি যেনো এরিকের বুক ফালাফালা করে দিচ্ছিল। এক মুহূর্তের জন্য মনে হলো এরিক কেঁপে উঠলো। কিন্তু পরক্ষণেই সে নিজেকে সামলে নিয়ে আয়ানের দিকে হাত বাড়ালো।

সাপেরা সামিয়াকে নিয়ে এসেছে জলের গভীরে গোপন একটা রাজ্যে। সামিয়া এখন মানব রূপেই আছে। কিন্তু সে খুব ভালো করেই পানির নিচে শ্বাস নিতে পারছে। সামুদ বলেছিলো ভ্যাম্পায়ার হয়েও সামিয়া যখন দিনের আলোয় বের হতে পারবে, তেমনি সামিয়া নাগিন। তাই জলের নিচেও সে নিশ্বাস নিতে পারবে। সামিয়া বেশি অবাক হয়নি। কারণ অবাক হওয়ার মতো বিষয় হলো পানির নিচে এতো বড় রাজ প্রাসাদ আর বাড়ি ঘর।
পানির নিচে যে এইসব থাকতে পারে সামিয়া তা কোনোদিন কল্পনাও করতে পারেনি।
আয়ানের কথা মনে পড়তেই সামিয়া হুহু করে কেঁদে ওঠে। তার কান্না দেখে একটা সর্পমানবী এগিয়ে আসে তার দিকে।
আজ যেনো সামিয়া কোন কিছুতেই ভয় পাচ্ছে না। এমনি সময় হলে এই সর্পমানবী কে দেখে সামিয়া ভয়ে কুকরে যেতো।
কিন্তু এখন তার কিছুই হচ্ছে না।
সেই মেয়েটা সামিয়ার কাছে এসে দাঁড়িয়ে তাকে ভালো করে পর্যবেক্ষণ করতে থাকে। সে এমনভাবে সামিয়াকে পর্যবেক্ষণ করছিলো যেনো জীবনে মানুষ দেখেনি। আসলে দেখবেই বা কি করে, তারা যে জলের প্রাণী।
আর সামিয়া পৃথিবীর একটা মানুষ।
এতক্ষণে সামিয়া তার কান্না থামিয়ে দিয়েছে ওই মেয়ের ওইভাবে পর্যবেক্ষণ করা দেখে।
সামিয়া এইসব দেখে অনেকটা ঝাঝালো কন্ঠে তাকে জিজ্ঞেস করলো,
-"এই ভাবে আমাকে দেখার কিছুই হয়নি। আমি অন্য গ্রহের প্রাণী নই।"
সামিয়ার এই ধরণের কথা শুনে সর্পমানবী ফিক করে হেসে চলে গেলো।
নাগ রাজ্যোর রাজা এইদিকে চিন্তায় রয়েছে। কারণ তারা তাদের রাজ্যে সামিয়াকে ধরে এনেছে। তাকে এখানে ধরে আনার তাদের কোন ইচ্ছাই ছিলোনা। কিন্তু এখন ভুল করে এখানে আনতে হলো। নাগ রাজ রেগে গেছে প্রচন্ড। রাগে সে তার নতুন সেনাপতির গর্দান নিতেও দ্বিধাবোধ করলো না। এতদিনের এক ভালো রাজা আজ হঠাৎ করে পর্যন্ত সবার সামনে হিংস্র হয়ে উঠেছে। বেশ কয়েকজনের মাথা কেটে দিয়েছে বিনা অপরাধে। কারণ একটাই। সামিয়াকে ধরে কেনো আনা হয়েছে। এখন সবার ধ্বংস নিশ্চিত। সেই ভয় ঢুকে গেছে রাজার মধ্যে। কিন্তু সেই ভয়ের কারন সবার অজানা। শুধু আগের সেনাপতি সামুদ এইসব বিষয়ে জানতো। কিন্তু সেও এখন মৃত। তাই আর কোন উপায় নেই।
সামিয়ার মন মানসিকতা সব বিগরে যাচ্ছে। একবার কাঁদছে আয়ানের জন্য, আবার রাগ করছে সেই ভ্যাম্পায়ারের উপর যে তাকে তুলে নিয়ে গেছে, আবার খুব রেগে যাচ্ছে এই সাপদের উপর। কারণ প্রথমে তারাই তাদের আক্রমণ করেছিলো, আর সেই জন্যই এতকিছু।
সামিয়ার চোখ এইবার একবার লাল একবার কালো হতে লাগলো। একবার তার হাতের নখ বের হতে লাগলো আবার মুখ দিয়ে সরু জিহ্বা বের হতে লাগলো। এইবার সামিয়ার মানসিকতা একটা জায়গায় এসে থমকে গেলো। সেটা হলো প্রচণ্ড রাগ। আর রাগ উঠলে সামিয়া যে কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে সেটা একমাত্র তার সামনে যে থাকে সেই জানে।
সামিয়া একটু একটু বুঝতে পারছে ভ্যাম্পায়ারদের সাথে এই নাগদের কিছু যোগ সুত্র আছে। তাই সামিয়া আয়ানের প্রতিশোধে বুদ হয়ে যায়।
আর সামিয়ার ভিতরে রাজ মহলের ভিতর থেকে অদ্ভুত একটা টান আসছিল। তাই সে আর দেরি করলো না। তার ঘর থেকে সে বের হওয়ার চেষ্টা করলো।
কিন্তু তাকে বাধা দিলো কিছু সর্পমানব। সামিয়া অগ্নিদৃষ্টিতে তাকালো তাদের দিকে। কিন্তু তাও তারা তাকে বাধা দেওয়ার চেষ্টা করলো। রাগের সীমা অতিক্রম করে গেলো সামিয়ার।চোখ জোড়া পুরো লাল হয়ে গেলো, আর চোখের ঠিক মাঝ বরাবর ফুটে উঠলো একটা কালো মণি। হাতের নখ বড় বড় হয়ে গেলো। মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো একটা সরু জিহ্বা। মাথার চুল বাতাসে উড়তে শুরু করে দিলো। পানির নিচে বাতাস নেই, কিন্তু তাও তার চুল পানির ভিতরে নড়াচড়া করতে শুরু করে দিলো। পিঠ চিরে বেরিয়ে এলো বিশাল দুটো ডানা, আর পায়ের জায়গায় তৈরি হলো আগের তুলনায় দশ গুণ বড় একটা লেজ। সামিয়ার শরীরে ধীরে ধীরে কিছু পোশাকের আস্তরন তৈরি হয়ে গেলো।
আগে প্রত্যেকবার সামিয়া আলাদা আলাদা ভাবে ভ্যাম্পায়ার আর নাগিন রূপে এসেছে। কিন্তু এই প্রথমবার সে এক সাথে আর একই সময়ে দুটো রূপে নিজেকে ধারণ করলো।সামিয়া পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আছে।
সে খপ করে সেই সর্পমানব দুইজন কে ধরে ফেললো আর হাতের চাপে তাদের মস্তিষ্ক গলিয়ে দিলো। সামিয়ার শরীরে এখন চলে এসেছে একটা রাক্ষুসে শক্তি।
মনে হচ্ছিল সে পাহাড় তুলে ফেলে দিতে পারবে। সামিয়া এগিয়ে যেতে থাকলো রাজ প্রাসাদের দিকে। পথের মাঝে যতো সেনা আসছিল সবাইকে সে পিষে দিয়ে আসছিল। সামিয়ার বিষের তীব্রতা আর ক্ষিপ্রতার সমানে প্রাণ হারায় শো খানেক সর্পমানব।
সামিয়া একটা আধা নাগিন। কিন্তু এই পূর্ন নাগেরাও তার বিষের প্রভাবে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছিলো। কারণটা এখনও রহস্য সামিয়ার কাছে।
সামিয়া ঢুকে পড়ে রাজ প্রাসাদের ভিতরে। এখন আর তাকে কেউ বাধা দিচ্ছে না। কারণ যেই বাধা দিবে সেই প্রাণ হারাবে।
সামিয়া সোজা রাজার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। আজব বিষয় হলো সামিয়া রাজাকে আগে কোনোদিন দেখেনি। কিন্তু তাও সে তাকে চিনে ফেলে।
সামিয়া সরাসরি তাকে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-"ভ্যাম্পায়ার রাজ্য কোথায়? তাদের সাথে আপনাদের কি সম্পর্ক? আমি কে? আমায় কেনো এখানে ধরে আনা হয়েছে?"
নাগ রাজ মনে হয় এইরকম কিছুর জন্যই অপেক্ষা করছিলো। হঠাৎ করে সে লাফিয়ে ওঠে। হাত বাড়াতেই তার হাতে চলে আসে একটা তলোয়ার। সাথে সাথে সেটা নিয়ে সে সামিয়াকে আক্রমণ করে দেয়। হঠাৎ আক্রমণে সামিয়ার একটা হাত কেটে পরে যায়। সেটা দেখে হাসতে থাকে নাগ রাজ। আর বলে,
-"এটা ঐশ্বরিক তলোয়ার। এটা দিয়েই তোমার মৃত্যু নিশ্চিত।"
সামিয়া তার কাটা হাতের দিকে তাকিয়ে থাকে। সে বুঝতে পারেনা কি করবে। হঠাৎ দেখতে থাকে তার কেটে পরে যাওয়া হাত নিজে থেকে হাওয়ায় ভেসে আবার তার আগের জায়গায় লেগে যায়। এটা দেখে সামিয়ার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। সে বুঝতে পারে এই তলোয়ার দিয়েও তার কোন ক্ষতি হবে না। তাই দ্বিগুণ উদ্দামে সামিয়া আক্রমণ করতে যায়। রাজাকে দেখে মনে হলো সে বিশাল ভাবে শকড খেয়েছে সামিয়ার হাত ঠিক হয়ে যাওয়া দেখে।
কিন্তু তার করার কিছুই নেই। সে আক্রমণ করতেই থাকে। কিন্তু যতো ক্ষত হচ্ছিল সব আপনা আপনিই ঠিক হয়ে যাচ্ছিলো। সামিয়া বলে ওঠে,
-"তোকে সুযোগ দিয়েছিলাম। আমার প্রশ্নের উত্তর দিলে তোকে ছেড়ে দিতাম। কিন্তু তুই আমায় আঘাত করেছিস। এই জন্য তোর মুক্তি নেই।"
বলেই সামিয়া তার বিশাল লেজ দিয়ে পেচিয়ে ধরে নাগ রাজ কে। প্রথমে তার ভ্যাম্পায়ার দাঁত বের করে কিছুটা রক্ত খেয়ে নেয় তার থেকে, আর তারপর তার বিষ দাঁত বসিয়ে দেয় নাগ রাজের গলায়। সাথে সাথে নাগ রাজ মারা যায়।
সামিয়া সেখান থেকে বেরিয়ে আসতে চাইবে তখনই কিছু একটা অনুভব করতে থাকে সে। হঠাৎ করে নাগ রাজের হাতে থাকা তলোয়ার সামিয়ার হাতে চলে আসে। আর সেই তলোয়ার সামিয়াকে রাস্তা দেখিয়ে নিয়ে যায় একটা গোপন ঘরের দিকে।
সেখানে ঢুকে সনিয়া অবাক হয়ে যায়। দেয়ালে টাঙ্গানো একটা ছবি দেখে সেদিকে দৃষ্টি আটকে যায়। মনোযোগ দিয়ে সেই ছবি দেখতে থাকে সামিয়া। মনে হয় ছবিতে থাকা যুবক বহু দিনের পরিচিত তার।
ছবি থেকে মুখ ফিরিয়ে সামিয়া আশেপাশে তাকিয়ে দেখে একটা মুকুট রয়েছে। মনে হচ্ছিল মুকুটটা তাকে আগ বাড়িয়ে ডাকছে। সামিয়া মুকুট হাতে নিয়ে মাথায় পরিধান করে। সাথে সাথে সামিয়ার মাথার ভিতরে দৃশ্যমান হতে থাকে আবছায়া প্রতিবিম্ব। যার কিছুই সামিয়ার বুঝে আসেনা। সে মুকুট পরিধান করে এক হাতে সেই তলোয়ার আর আরেক হাতে সেই ছবি নিয়ে বেরিয়ে আসে সেই ঘর থেকে।
বাহিরে তখন আরো হাজার হাজার নাগ দাঁড়িয়ে আছে। তাঁরা নিজ চোখে তাদের রাজার মৃত্যু দেখেছে। এখন সামিয়াকে এই রূপে দেখে তাদের ভিতর থেকে একজন বৃদ্ধ নাগ বেরিয়ে এসে সামিয়ার দিকে আঙুল তুলে বলে,
-"আমাদের মহারাণী ফিরে এসেছে। ওই রাজা নকল। এটাই আমাদের মহারানী।"
এটা শুনে যত নাগ নাগিন ছিল তারা সবাই সামিয়ার সামনে মাথা নত করলো।
সামিয়া যেনো একটা ঘোরের ভিতরে চলে গেছে। সে তার অজান্তেই সিংহাসনে বসে পড়লো। কিন্তু বেশিক্ষণের জন্য নয়।
সিংহাসন ছেড়ে দাঁড়িয়ে সেখানে সেই মুকুট আর ছবি রেখে হাতে তলোয়ার নিয়ে সামিয়া নাগ রাজ্য থেকে বেরিয়ে যেতে লাগলো। সব নাগ নাগিন তখনও সেই সিংহাসনের সামনে মাথা নত করে বসে আছে।
নাগ রাজ্য থেকে বেরিয়ে সামিয়া আবার শুধু তার ভ্যাম্পায়ার রূপ ধারণ করে উড়াল দিলো আকাশে এক অজানা গন্তব্যে।
ঠিক তখনই তার নজরে এলো কিছু একটা তার দিকে উড়ে আসছে।


Picked up.
চলবে........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আলগী নদী!

সাথী হারা

"রহস্যে ঘেরা"পর্ব-০৪