"রহস্যে ঘেরা"পর্ব-০৪

রহস্যে ঘেরা


পর্ব: 04

সামিয়ার কলেজের কয়েকজন আয়ান আর সামিয়া কে একসাথে দেখে হিংসা করতে শুরু করে দেয়। কারণ হলো, আয়ান বড় লোক পরিবারের, রাজপুত্রের মত দেখতে। কিন্তু সামিয়া হলো বিধবা। আর সে অপয়া। কিন্তু কলেজের বাকি সব মেয়েদের থেকে সামিয়া সবচে সুন্দর দেখতে। তাও বাকি মেয়েদের হিংসা সামিয়াকে নিয়ে।
তাই তারা একত্র হয়ে ঠিক করে নেয় তারা লুকিয়ে সামিয়ার বাড়িতে যাবে তাও রাতের বেলায়। আর তাকে ভূতের ভয় দেখিয়ে কুপকাত করিয়ে দিবে।
প্ল্যান অনুযায়ী তারা সেটাই করতে শুরু করে দেয়।


রাতের বেলা তারা সামিয়ার বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। দারোয়ান কে ফাঁকি দিয়ে কোনমতে তারা ঢুকে পড়ে বাড়ির ভিতর।
পূর্ণিমার রাত! আকাশে পূর্ণ চাঁদ সমানভাবে তার আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে।
দূরে কোথাও মাঝে মাঝে শিয়ালের ডাক ভেসে আসছে। সাথে সাথে কেঁপে উঠছে সামিয়াকে জব্দ করতে আসা চারজন মেয়ের দল। কিন্তু তারা এক রোখা। তারা যে করেই হোক সামিয়াকে একটা শিক্ষা দিয়েই ছাড়বে। তাদের সাথে রয়েছে ভয়ানক কিছু মুখোশ, আর ভূতের পোশাক। তাদের প্ল্যান হলো নিচে কিছুর শব্দ করে সামিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে নিয়ে আসা আর যখন সামিয়া নিচে আসবে তখনই সবাই তাকে ভয় দেখাবে আর আয়ানের থেকে দূরে থাকার জন্য বলবে।
তারা সামিয়ার ঘরের জানালার পাশে একটা ঝোপের আড়ালে গিয়ে মুখ দিয়ে আওয়াজ করতে শুরু করে দেয়।

এইদিকে সামিয়া গভীর ঘুমে। তার চোখ থেকে যেনো ঘুম ছুটছে না। প্রথমবারের মত ঘুমের মধ্যেই তার তৃষ্ণা পেতে শুরু করে দিলো। প্রচণ্ড রকমের তৃষ্ণা। এই তৃষ্ণা খালি পানিতে মেটার নয়। তাজা গরম রক্ত চাই তার। সামিয়া ঘুমের ভিতরেই ছটফট করতে শুরু করে দিলো। বিছানার চাদর খামছে ধরলো। কিন্তু তার ঘুম ভাঙল না। এমন মনে হচ্ছিল নিজের উপর তার কোন কন্ট্রোল নেই। অন্য কিছু তাকে নিয়ন্ত্রণ করছে।
এমন সময় চোখ মেলে তাকালো সামিয়া। রক্ত বর্ন চোখ। সাথে মুখের দুপাশ দিয়ে বের হয়ে আসলো দুটো দাঁত। দাঁতে দাঁত চেপে সামিয়া গন্ধ শুকতে লাগলো। কাছেই সে তাজা রক্তের উৎসের গন্ধ পেলো। মুহূর্তের মধ্যেই একটা বাদুরে পরিনত হয়ে গেলো সে, আর খোলা জানালা দিয়ে বাহিরে বেরিয়ে গেলো।

সামিয়ার অপেক্ষায় থাকা চারজন দেখলো সামিয়ার ঘর থেকে একটা বাদুর বেরিয়ে আসছে। তারা সেটাকে স্বাভাবিক ভাবেই নিলো। বাদুর রুপি সামিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে তার খাদ্য দেখতে পেয়ে তাদের মাথার উপর উড়তে শুরু করে দিলো সুযোগের অপেক্ষায়। সে চায় এক এক করে সবার রক্ত খেতে।
যখন চারজন বুঝলো এইভাবে কাজ হচ্ছে না তখন তারা ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো। কারণ রাত অনেক গভীর হয়ে এসেছে। আর তাদের দিকে যদি কেউ আসে তাহলে বিপদ তাদের। তারা সোজা যেই রাস্তায় এসেছিল সেই রাস্তা ধরে চলে বেরিয়ে গেলো বাড়ি থেকে।
ফাঁকা রাস্তায় তারা চারজন গল্প করতে করতে হেঁটে যাচ্ছিলো। এমন সময় হঠাৎ করে তাদের সবার মাথার উপর একটা বাদুর এসে উড়তে শুরু করে দিলো। চারজন সেটাকে তাড়িয়ে দিতে চাইলেও সেটি যাচ্ছিলো না। এক সময় সেটা তাদের থেকে একটু দূরে গিয়ে থেমে যায়। তারা চারজন দেখতে থাকে কি হচ্ছে।
তারা দেখলো বাদুরটা ধীরে ধীরে একটা মানুষের রূপ নিচ্ছে। আর সেটা আস্তে আস্তে একটা পূর্ণ মানুষ হয়ে যায়। কালো জামা পড়া একটা ছায়ামূর্তি।
সেই চারজন ভয় পেয়ে যায়। চিৎকার দেওয়ার মতো আওয়াজ তাদের গলা দিয়ে বের হচ্ছিল না। তাই তারা যে যার মতো দৌড় শুরু করে দেয়।
তাদের অবস্থা দেখে বিকট শব্দে হাসতে শুরু করে দেয় সামিয়া। হঠাৎ করে তার পিছন থেকে বেরিয়ে আসে দুটো ডানা। তীব্র গতিতে সেই ডানার সাহায্যে উড়ে যায় সামিয়া, আর একজন কে ধরে ফেলে। ল্যাম্পপোস্টের আলোয় যাকে সামিয়া ধরেছে সে স্পষ্ট সামিয়ার ভয়ানক মুখ দেখতে পায়।
সেখান দিয়ে দুটো দাঁতের ঝলকানি কাঁপিয়ে তোলে তার বুক। কিন্তু ততক্ষণে দেরি হয়ে গিয়েছে। সামিয়া তার ঘাড়ে বসিয়ে দিয়েছে তার দুটো তীক্ষ্ণ দাঁত। সাথে সাথে কাঁপতে শুরু করে দিলো সেই মেয়েটার দেহ। আর একটু পরেই তা নিস্তেজ হয়ে মাটিতে পড়ে যায়।
সামিয়া যেই উড়ে আরেকজন কে ধরতে যাবে ঠিক তখনই কে যেন আটকে রাখে সামিয়াকে। সামিয়া পিছন ফিরে দেখে একটা অর্ধ সাপ আর অর্ধ মানব তার লেজ দিয়ে পেচিয়ে রেখেছে তাকে। হিংস্র চোখে সামিয়া তার দিকে তাকায়। কিন্তু কোন লাভ হয়না। সামিয়া তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করেও নিজেকে মুক্ত করতে ব্যর্থ হয়।
হঠাৎ করে সেই অর্ধ সাপ সামিয়ার দিকে কিছু ছুড়ে দেয়। সামিয়া সাথে সাথে জ্ঞান হারায়।
এরপর সেই সাপটা সামিয়াকে কৌশলে তার বাড়িতে নিজ ঘরের বিছানায় শুইয়ে দিয়ে আসে। কারণ এখন সামিয়া স্বাভাবিক হয়ে গেছে। আর সেই সর্পমানব জানে আপাততঃ সামিয়ার কিছু মনে থাকবে না। তাই সে নিজের কাজে চলে যায়।

পরদিন সকালে যথা নিয়মে সামিয়া ঘুম থেকে উঠে খাবার খাওয়ার জন্য নিচে যায়। সেখানে গিয়ে টিভি চালু করতেই আবার শকড হয়ে যায় সে। কারণ টিভিতে দেখাচ্ছে, তার কলেজের কয়েকজন রাতে খুন হয়েছে। তিনজন তীব্র বিষের প্রভাবে, আর একজন রক্তশূন্য হয়ে।
সামিয়া বুঝতে পারেনা কিছুই। তার মাথার ভিতরে কিছুই ঢোকে না। কারণ তার কিছুই মনে নেই। সামিয়া স্বাভাবিক হয়ে তার কলেজে চলে যায়। সেখানে যেতেই তার দেখা হয়ে যায় আয়ানের সাথে। আয়ান কেমন জানি হয়ে সামিয়া কে দেখেছিল। মনে হচ্ছিল সে অন্য সামিয়াকে দেখছে।
সে দ্রুত সামিয়ার হাত ধরে কলেজের পিছনের সেই জায়গায় নিয়ে যায়। সামিয়া কিছুই বুঝতে পারছিল না আয়ানের কাজকর্ম।
আয়ান সামিয়ার দিকে সরাসরি তাকায়। চোখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
-"কে তুমি?"
-"আমি সামিয়া।"
-"কাল সারা রাত কোথায় ছিলে?"
-"আমার বাসায়! ঘুমিয়ে ছিলাম। কিন্তু এইসব প্রশ্ন কিসের জন্য?"
আয়ান তখন আর কথা না বাড়িয়ে সামিয়ার সামনে একটা মোবাইল বের করে ভিডিও চালু করে দেয়। সামিয়া সেখানে স্পষ্ট দেখতে পারে একটা বাদুর কি করে মানুষ হয়ে গেলো, আর সেই মানুষের পিছনে দুটো পাখা গজিয়ে সেটা উড়ে একটা মেয়ের দিকে এগিয়ে যায়। হঠাৎ করে সামিয়া মৃদু আর্তনাদ করে পিছিয়ে যায়। কারণ সামিয়া সেই মানবীর মুখ দেখে ফেলেছে। সেটা আর কেউ ছিলোনা! সেটা সামিয়া নিজে ছিল। সামিয়া নিজের চোখকে বিশ্বাসই করতে পারছিল না যে সে এইরকম কিছু একটা দেখতে পারবে। সামিয়া নিজের ভয়ঙ্কর চেহারা দেখে নিজেই ভয় পেয়ে যায়। সে আয়ানের দিকে তাকায় তার মনের ভিতর সৃষ্টি হওয়া প্রশ্নের জন্য।
আয়ানও সরু চোখে সামিয়ার দিকে তাকায়। মনে হয় সে বুঝতে পারছেনা যে সামিয়া এইসব কেনো করছে বা এটা আজও সামিয়া কিনা।
আয়ান বলতে শুরু করে,
-"কিছু মেডিসিন কিনতে আমি গাড়ি নিয়ে বের হয়েছিলাম। মেডিসিন কেনার পর যখন আমি ওই রাস্তা দিয়ে ফিরছিলাম তখন আমার গাড়ি নষ্ট হয়ে যায়। আশেপাশে কোন গ্যারেজ ছিল না তাই আমি চাঁদের আলোয় হাঁটা শুরু করে দেই। হাঁটতে বেশ লাগছিল। কিন্তু কিছুক্ষণ পর আমি দূরে কিছু মেয়ের শব্দ শুনতে পাই। মনে হচ্ছিল তারা কিছু তারাচ্ছিল। আমি সেদিকে এগিয়ে যাই। তখনই আমি এই দৃশ্য দেখতে পারি। সাথে সাথে মোবাইল বের করে ভিডিও করে ফেলি সেটার।
আর সেখান থেকে পালিয়ে আসি।"

সামিয়া সব শুনে ডুকরে ওঠে। ছলছল নয়নে সে আয়ানকে বলে,
-"বিশ্বাস করো, আমি এইসবের কিছুই জানি না।"
এরপর সামিয়া শুরু থেকে সবটা খুলে বলে আয়ানকে। এখন পর্যন্ত যা যা হয়েছে সব খুলে বলে সে।
আয়ান সব শুনে বিস্মিত হয়ে যায়। এই মুহুর্তে সামিয়াকে বিশ্বাস করা ছাড়া তার কোন উপায় নেই। সামিয়ার প্রতি তার একটা খারাপ লাগা কাজ করতে শুরু করে। সে সামিয়ার সামনেই সেই ভিডিও ডিলিট করে দেয় আর আশ্বাস দেয় সে কাউকে কিছু বলবে না।
আয়ান সামিয়া কে বলে,
-"আমি প্রতিজ্ঞা করছি, আজ থেকে আমি সব ভুলে গেছি। আর এখন থেকে তোমার সাথে যা যা হয়েছে সব রহস্যের সমাধান করতে আমি তোমায় সাহায্য করবো।"
সামিয়া জানেনা সে কি বলবে। এতদিন পর সে যেনো ভরসা করার মত একজন কে পেয়েছে। তাই তার ভেজা নয়নে, আবেগে জড়িয়ে ধরে আয়ানকে।

আয়ান সামিয়াকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়ে তার নিজ বাড়িতে গিয়ে ভাবতে থাকে,
"সে তো সামিয়াকে কথা দিয়েছে, কিন্তু সে এটা পালন করবে কি করে। প্রথমত রক্ত শূন্য লাশ। এক কথায় ভ্যাম্পায়ার সত্তা আছে সামিয়ার মধ্যে। দ্বিতীয়ত বিষ, মারাত্মক বিষ। এর অর্থ বিষ কন্যা বা সর্প কন্যা।
কিন্তু একটা মানুষের মধ্যে এইরকম অলৌকিক ক্ষমতা থাকার কোন কথা নয়। তাহলে হয় সামিয়া মানুষই নয়, অথবা এর পিছনে অন্য কিছুর হাত রয়েছে। সামিয়া যদি মানুষ না হয় তবে তার বাবা মাও মানুষ নয়। আবার এও হতে পারে সামিয়া যাদের বাবা মা মনে করে তারা আসল বাবা মা নয়।"
এত কিছু ভাবতে ভাবতে হাফিয়ে ওঠে সে। তার পক্ষে আর সম্ভব নয়। এখন যা করার তাকে ভেবে চিন্তে করতে হবে।

Picked up.
চলবে..........

রহস্য উন্মোচন হতে চলেছে। আয়ান কে এখন কেমনে সাইড করা যায়?

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আলগী নদী!

সাথী হারা