"রহস্যে ঘেরা" পর্ব-৭
রহস্যে ঘেরা
পর্ব: 07
-"দ্বি সত্তার অধিকারী তুমি।" বলে উঠলো সর্পমানব।
তার মুখে এই কথা শুনে চমকে উঠলো সামিয়া আর আয়ান।
এতক্ষণ একটা বদ্ধ ঘরের মধ্যে একটা কাচের বাক্সের মধ্যে চোখ মুখ বেঁধে রাখা হয়েছিল সেই সর্পমানব কে। তার বিশাল লেজ কোনমতে ঠেসে ঢুকানো হয়েছে। আর সেটা শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছিল। আয়ান সেখানে গিয়ে তার মুখের বাঁধন খুলে দেয়। আর মুখ খুলতেই সে ওই কথাটা বলে ওঠে।
সামিয়া জিজ্ঞেস করে,
-"আমি কে? কি আমার পরিচয়? সব আমাকে খুলে বলুন। আমি আর এই অভিশপ্ত জীবন বয়ে বেড়াতে পারছি না। আমি মুক্ত চাই এইসব থেকে।"
সর্পমানবের মুখে একটা হাসি দেখা দিলো। সে বললো,
-"আমাকে এইভাবে বন্দি করে রেখে লাভ নেই। আমি কিছুই বলবো না। আমার জীবন গেলেও আমি কিছুই বলবো না।"
সামিয়া হাত জোর করতে থাকলো তার কাছে। কিন্তু সর্পমানবের এক জেদ। এইবার আয়ান মুখ খুলল। সে বললো,
-"ভ্যাম্পায়ার আর নাগ।এই দুই জাতি পৃথিবীতে আছে সেটা কেউ জানেনা। এরা শুধুই কাল্পনিক ছিল আমাদের কাছে। কিন্তু চোখের সামনে এইসব দেখে এখন বিশ্বাস হয়ে গেছে। আমরা বেশি কিছু জানতে চাইনা। শুধু এইটুকু বলুন সামিয়া দ্বি সত্তা মানে কি? আর রসুন তার কোন ক্ষতি করতে পারেনি কেনো? আর আরেকটা ছোট প্রশ্ন। সেটা হলো সামিয়ার বিয়ের রাতে তার স্বামীকে কে খুন করে?
-"ঠিকাছে আমি শুধু সেটুকুই বলবো। তার আগে আমায় মুক্তি দাও। এইভাবে থাকতে আমার কষ্ট হচ্ছে।"
-"আমরা কি এতই বোকা! আপনাকে মুক্ত দেই আর আপনি আমাদের সারা জীবনের মত দুনিয়া থেকে মুক্তি দিন।" বলে উঠলো আয়ান।
সর্পমানব বললো,
-"ঠিকাছে মুক্তি দিতে হবে না। আমাকে মানব রূপে আসতে দাও। তারপর বন্দি করো আবার।"
এইবার আয়ান কিছুক্ষন ভাবল। তারপর তারা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। এইদিকে সর্পমানব ঘরের ভিতরে একাই রয়েছে। সে বুঝতে পারছে তারা ঘর থেকে বেরিয়ে যাচ্ছে।
আয়ান আর সামিয়া ঘর থেকে বেরিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আর একটা মনিটরের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।
সেখানে সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজে সর্পমানব কে দেখা যাচ্ছে। আয়ান একটা সুইচ চাপ দেয়। আর সর্পমানবের লেজের চেন খুলে যায়। মুক্তি পেয়ে সর্পমানব তার মানব রূপ ধারণ করে। সাথে সাথে কথা থেকে যেনো একটা অজ্ঞান করার ডাং এসে লাগে তার ঘাড়ে। আবার সে জ্ঞান হারিয়ে পরে যায়।
এইবার তার চোখ খোলে একটা চেয়ারের সাথে বাঁধা অবস্থায়। লোহার চেয়ারে আর মজবুত চেন দিয়ে বাঁধা। আগের মত এইবারও তার চোখ বাঁধা। কিন্তু মুখটা শুধু খোলা।
সে অনুভব করতে পারে তার আশেপাশেই আয়ান আর সামিয়া রয়েছে। তাই সে আর সূচনা না করে বলতে থাকে,
-"ধন্যবাদ এইভাবে বেঁধে রাখার জন্য। কিন্তু আমি কিছু মনে করিনি। কারণ দোষটা আমারই। এখন তোমাদের প্রশ্নের উত্তর দেই আগে। সামিয়া হলো দ্বি সত্তার অধিকারী ।সে একই সাথে নাগিন আর ভ্যাম্পায়ার। তার ভিতরে এই দুইটা সত্তা সমান সমান রয়েছে। একটুও কম বেশি নেই। কিন্তু সে এখনো তার সত্তা কে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনা। সেই জন্য হঠাৎ হঠাৎ সে একেক সত্তার হয়ে যায়। সামিয়া আধা ভ্যাম্পায়ার ।তাই দিনের আলোতে তার কিছু হয়না। তেমনি আধা নাগ সে। তাই পানির নিচেও সে শ্বাস নিতে পারবে। আর রসুন বা এক্সিরিজমের পানিও তার কিছুই করতে পারবেনা। আর তুমি মানুষ নও। ভ্যাম্পায়ার আর নাগ সব সময় মানুষের রূপ নিতে সক্ষম। তাই তুমি বেশিরভাগ সময় এই রূপেই থাকো। কিন্তু তোমার বয়সের সাথে সাথে তোমার আসল সত্তা প্রকাশ পেতে শুরু করে দিয়েছে।" এইটুকু বলে থামল সর্পমানব।
সামিয়া আর আয়ান অবাক হয়ে গেলো এটা শুনে যে সামিয়া মানুষ নয়। বরং অন্যকিছু সে।
তারা দুইজন এতক্ষণে খেয়াল করলো সর্পমানবের ঘাড়ে, আর পায়ে বিশাল ক্ষত। আর সেগুলো মারাত্মক হয়ে আছে। তারা দুইজনই বুঝতে পারলো এগুলো ওই ভ্যাম্পায়ার যুবকের জন্য হয়েছে। এতক্ষণে সর্পমানব হাফাতে শুরু করে দিয়েছে। মনে হচ্ছে সে খুব কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু তাদের এখন কিছুই করার নেই। কিন্তু সামিয়ার মনে দয়া দেখা দিলো। তাই সে ছুটে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে এসে তার ঘাড়ে আর পায়ে ব্যান্ডেজ করে দিলো।
সর্পমানব সামিয়ার এইরূপ আচরণ দেখে এত যন্ত্রণার মধ্যেও ফিক করে হেসে দিলো। আর বললো,
-"এত কিছুর পরেও আমার জন্য তোমার এত দয়া। আসলেই যোগ্য পিতা মাতার যোগ্য সন্তান তুমি। কিন্তু আফসোস আমি প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাই তোমায় কিছুই বলতে পারবো না। আর এইসব ওষুধে আমার কিছু হবে না। আমার শরীরে ভ্যাম্পায়ারদের বিষে ছেয়ে গেছে। তাই আমার মৃত্যু নিশ্চিত। একটু পরেই আমি মারা যাবো। আর হ্যাঁ, আমার নাম সামুদ।"
সামিয়া মনে হয় এই কথা শুনে একটু দুঃখ পেলো। কিন্তু একটা প্রশ্ন তার মাথার ভিতর এখনো ঘুরছে। সামুদ বলেছে যোগ্য পিতা মাতার যোগ্য সন্তান। কিন্তু তাহলে তার আসল পিতা মাতা কই? আর বিয়ের রাতেই তার স্বামী কেনো মারা যায়?
সে বারবার সামুদকে অনুরোধ করতে থাকে। কিন্তু সে কিছুই বলে না। একটু পর সামুদের গায়ের চামড়া ঢিলে হয়ে আসতে থাকে। সাপ যেমন খোলস ছড়ায় তেমন। সামুদ শেষ বারের মতো সামিয়ার দিকে তার শীতল চোখ দিয়ে তাকায়। আর বলে,
-"সাবধানে থেকো। আরো বড় বিপদ আসতে চলেছে। যদিও তোমার শক্তির কারণে কেউ তোমার ক্ষতি করতে পারবেনা। কিন্তু তোমাকে অন্যভাবে কাজে লাগাতে পারে তারা। তাই নিজেকে তৈরি করো। মজবুত করো।"
এটা বলার সাথে সাথে ধীরে ধীরে সামুদের গায়ের মাংস কুকরে যায়। চামড়া গা থেকে খুলে পড়ে যায়। ধীরে ধীরে সামুদের দেহ একটা মৃত সাপে রূপান্তর হয়ে যায়।
এটা দেখার পর সামিয়া আর নিজেকে শান্ত করতে পারেনা। কারণ সত্য জানার শেষ মাধ্যম আর নেই। আবেগে সে আয়ানকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করে দেয়।
এতক্ষণ তারা আয়ানের একটা গোডাউনের ভিতরে ছিল। কিছুক্ষণ আগেই তারা নিজ নিজ বাড়িতে চলে এসেছে। সামিয়া সারা রাত ঘুমায়নি। তাই বাড়িতে হয়েই সে ঘুমিয়ে পড়ে। কিন্তু আয়ানের ঘুমানোর মত সময় নেই। সে এখন গভীর চিন্তায় মগ্ন।
সামিয়ার শক্তি নিয়ে তাকে ভাবতে হচ্ছে। "সামুদ বলেছিলো সামিয়া মানুষ নয়। কিন্তু দ্বি সত্তার অধিকারী হওয়ার জন্য তার ভিতরে মানব সত্তাটা প্রকট হয়ে আছে। আবার সে এও বলেছিলো সামিয়া যখন খুশি তার রূপ পাল্টাতে পারে। তাহলে সামিয়া দিনের বেলাও তার ভ্যাম্পায়ার সত্তাতে আসতে পারে, আবার রাতের বেলাতেও নাগিন সত্তাতে। এক কথায় সামিয়া অধিক শক্তিশালী। কিন্তু সব হিসেবে মিলতে গেলে এখন পর্যন্ত সামিয়া নিজ ইচ্ছায় কখনো এইসব সত্তায় আসেনি। সব হয়েছে তার অজান্তেই। আর এখন সামিয়াকে তার এই দ্বি সত্তা নিয়ন্ত্রণ করতে শিখতে হবে।"
আয়ান পেয়ে গেছে তার প্রশ্নের জবাব। তার হিসেব যদি ঠিক হয় তাহলে এখন সামিয়াকে নিজে থেকে তৈরি হতে হবে। আর সামিয়াকে তার সত্তা দুটোর উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে শিখতে হবে আগে।
আয়ান সামিয়ার ভ্যাম্পায়ার সত্তাকে দেখেছে। কিন্তু তার নাগিন সত্তা কে এখনও স্বচক্ষে দেখেনি।
আয়ান একটা মুচকি হাসি দেয়, আর নিজেকে বলে,
"আয়ান! তাহলে তুমিই প্রথম মানুষ যে একটা অতিমানবীর প্রেমে পড়ে গেছো।"
এইটুকু ভেবেই সে বিশ্রামে চলে যায়। কারণ কালকের দিনটা বড় হতে চলেছে। সামিয়ার সাথে কথা বলে সব কিছু তাকে বুঝিয়ে দিতে হবে।
পরদিন সকালে আয়ান আর সামিয়া আবার সেই গোডাউনের ভিতরে এসে দাঁড়িয়ে আছে যেখানে কাল সামুদ মারা গেছে। সামুদের সাপের দেহ তারা আগুনে পুড়িয়ে দিয়েছে।
আয়ান এতক্ষণ ধরে সামিয়াকে তার শক্তির ব্যাপারে সব বুঝিয়ে দিয়েছে। আয়ান সামিয়ার কাছে জানতে চাইলো সে কি করে যখন তার সত্তা ভিতর থেকে বাহিরে আসতে চায়? সামিয়া তখন জবাব দিলো, "রাতের বেলা যখন তার চোখ লাল হয়ে উঠতে চায়, বা রাগ, দুঃখ হয় তখন সনিয়া ঘুমিয়ে পড়ে। আবার দিনের বেলা যখন সামিয়ার চোখ কালো হয়ে উঠতে চায় তখন সামিয়া শীতল পানিতে গোসল করে।"
আয়ান বুঝতে পারলো ভ্যাম্পায়ার সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করে ঘুম, আর নাগিন সত্তা কে নিয়ন্ত্রণ করে ঠান্ডা পানি। তাহলে এখন যদি সেগুলো বাদ দিয়ে দেওয়া হয় তাহলে সামিয়া যে কোন একটা সত্তার ভিতরে যে কোন সময় আসতে পারবে। কিন্তু সমস্যা একটাই। সামিয়া যদি ভ্যাম্পায়ার অথবা নাগিন সত্তায় আসে তাহলে সে নিজের ভিতরে থাকেনা। মনে হয় তার সেই ভ্যাম্পায়ার সত্তাই তাকে নিয়ন্ত্রণ করে। কিন্তু সামিয়াকে সেই সত্তাকে নিয়ন্ত্রণ করা শিখতে হবে। সেই সত্তা যেনো সামিয়ার বশে থাকে সেটা দেখতে হবে।
এখন আয়ানের কাজ হচ্ছে সামিয়াকে তার নাগিন সত্তায় নিয়ে আসা। কারণ এখন দিনের বেলা। তাই এটাই সবচেয়ে ভালো সময়। আয়ান জানে রাগ আর কষ্ট, এই দুটো জিনিস সামিয়ার নাগ সত্তা কে বের হতে সাহায্য করে। আর আরেকটা জিনিস আছে সেটা হলো যখন সামিয়া বিপদে পড়ে তখন। যেমনটা কলেজের ছেলেদের সাথে হয়েছিলো।
আয়ান সামিয়ার সামনে যায়। তাকে তার দুঃখের স্মৃতি মনে করতে বলে। তাকে তার শত্রু আর বিভিন্ন ঘটনা মনে করতে বলে যা তাকে রাগীয়ে দিতে পারে বা কষ্ট দিতে পারে।
সামিয়া তার কথা শুনে চেষ্টা করতে থাকে। এক পর্যায়ে সে রাগে দুঃখে ফুঁসতে থাকে। তার চোখ ধীরে ধীরে কালো হয়ে যায়। জিহ্বা সরু হয়ে আসে। মাথা নিচের দিকে করা সামিয়া হঠাৎ আয়ানের দিকে তার ওই নিকষ কালো চোখ জোড়া দিয়ে রাগী দৃষ্টিতে তাকায়।
আয়ান বুঝতে পারে তার মস্ত ভূল হয়ে গেছে সামিয়ার সামনে থাকা। এখন যদি সামিয়া নিয়ন্ত্রণের বাহিরে থাকে তাহলে তার ভুলের মাশুল সামিয়ার তীব্র বিষ দিয়ে গুনতে হবে তাকে।
Picked up.
চলবে...........
গল্পের আর কোনো পর্ব পোস্ট করা হবে না কারন,,,আপনারা এখন আর কেউ আর গল্প পড়েন না,,,,,
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন