"রহস্যে ঘেরা " পর্ব-৬

রহস্যে ঘেরা

পর্ব: 06

একটা হাত বাড়িয়ে একটা ছুরি নিয়ে যেই অন্য হাতের উপর চালাতে যাবে ঠিক তখনই জানালার কাচ বিকট শব্দে ভেঙে গেলো। নিচে সামিয়ার বাবা মার ঘর পর্যন্ত সেই শব্দ যাওয়ার কোন উপায় নেই। কারণ তার ঘর সাউন্ডপ্রুফ। হঠাৎ করে একটা মানুষ ঢুকে পড়লো সামিয়ার ঘরের ভিতরে। সেখানে সামিয়া দেখতে পেলো একটা যুবক দাঁড়িয়ে আছে তার ঠিক নাক বরাবর। বাদামী চুলের লাল চোখ যুক্ত একটা যুবক।


সামিয়া যে ভয়ে চিৎকার দিবে তারও কোন উপায় নেই। কারণ তার মুখ দিয়ে চিৎকার বের হচ্ছে না। এইদিকে কাচ ভাঙ্গার শব্দে তার হাত থেকে একটা সেই ছুরিটা পরে গিয়েছিলো। সামিয়া সেটা উঠিয়ে নিয়ে বাড়িয়ে ধরে আগন্তুকের দিকে। সামিয়ার এইরূপ আচরণ দেখে আগন্তুক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে এগিয়ে আসে সামিয়ার দিকে।
সামিয়া বারবার সেই যুবক কে ভয় দেখাতে থাকে। কিন্তু যুবকের কোন ভাবান্তর নেই। সে তার মত এগিয়েই আসছে। এইদিকে সামিয়া পিছিয়ে যাচ্ছে। পিছুতে পিছুতে সামিয়ার দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে।
এইদিকে আগন্তুক খুব কাছে চলে এসেছে।
যেই যুবকটি তার এক হাত বাড়িয়ে সামিয়াকে ধরতে যাবে তখনই সামিয়া তার চোখ বন্ধ করে ফেলে। আর একটু পরেই একটা আওয়াজ পায়। সামিয়া চোখ মেলে দেখে জানালা দিয়ে তার ঘরের ভিতরে প্রবেশ করেছে বিশাল একটা লেজ। আর সেটা সেই যুবককে পেচিয়ে ধরে জানালা দিয়ে বাহিরে নিয়ে যায়। সামিয়া শুধু বিস্মিত চোখে সব দেখে যাচ্ছিলো । কারণ তার সেই মুহূর্তে কিছুই করার ছিলোনা। হঠাৎ করে কি থেকে কি হচ্ছে তা তার ধারণার বাহিরে।
সামিয়া দ্রুত জানালার কাছে চলে গেলো। সেখানে গিয়ে দেখলো একটা মানুষ যার কোমর থেকে নিচের অংশ পুরোটাই লেজ সে তার ওই লেজ দিয়ে ধরে রেখেছে সেই যুবককে। আর সেই যুবক ছাড়া পাওয়ার জন্য হাঁসফাস করছে।
কিন্তু সর্পমানবের মনে কোন মায়া দোয়া নেই।
হঠাৎ করে স্থির হয়ে গেলো সেই যুবকের দেহ। সামিয়া ভাবলো সে মারা গেছে।কিন্তু একটু পরেই হঠাৎ করে সেই যুবক চোখ মেলে তাকালো। চোখ জোড়া ছিল তার টকটকে লাল। মনে হয় আগুনের ফুলকি বের হচ্ছিল সেটা দিয়ে।
হঠাৎ করে সেই যুবক তার দুই হাত প্রসারিত করে দিলো, আর তার পিছনে পিঠ চিরে বেরিয়ে আসলো দুটো ডানা। মুখ হা করে জোরে চিৎকার করে উঠলো সেই যুবক। আর মুখের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসতে লাগলো লম্বা দুটো দাঁত।
হাতের নখ বড় বড় হয়ে গেলো।
সামিয়া কিছুই বুঝতে পারছিল না। সে যেনো পাথর হয়ে গেছিল এইসব দেখার পর। সেই সময় হঠাৎ করে তার ঘরের দরজা ভেঙে যায়। সামিয়া সেদিকে তাকায়। সেখানে তাকাতেই সে যেনো আশার আলো দেখতে পায়। কারণ সেখানে আয়ান হাসি মুখে দাঁড়িয়ে ছিল। সামিয়া আর দেরি না করে ছুটে চলে যায় তার কাছে আর জড়িয়ে ধরে তাকে।
সামিয়া আয়ানকে কিছু বলতে চাইলে আয়ান তাকে বাধা দেয়। আর তার মুখ চেপে ধরে নিচে নিয়ে যায়।
তখনও সর্পমানবের কবলে সেই ভ্যাম্পায়ার যুবকটি আটকে ছিলই। আয়ান সামিয়াকে নিয়ে একটা নিরাপদ জায়গায় গিয়ে দেখতে থাকে ঠিক কী চলছে সেখানে।

ভ্যাম্পায়ার যুবকটি তার হাতের নখ গেঁথে দেয় সর্পমানবের লেজে। আর তার সর্বশক্তি প্রয়োগ করে বেরিয়ে আসে তার কবল থেকে। এইবার যুদ্ধ হবে সামনাসামনি। ভ্যাম্পায়ার যুবক তার পাখা মেলে উঠে যায় আকাশের দিকে। এইদিকে মাটিতে থাকা বিশাল সর্পমানব তার লেজ ব্যবহার করে আঘাত করার চেষ্টা করতে থাকে তাকে। কিন্তু সে বারবার ব্যর্থ হয়। তার ব্যর্থতা দেখে হেসে ওঠে ভ্যাম্পায়ার যুবক আর বিদ্যুৎ বেগে উড়ে আসে সর্পমানবের দিকে, এসেই তার ঘাড়ে কামড় বসিয়ে দেয়।
মৃদু চিৎকার করে ওঠে সর্পমানব। কিন্তু দমে যায়না সে। তার লেজ দিয়ে আবার পাকড়াও করে ফেলে তাকে, এইবার সর্পমানবের মুখ দিয়েও বেরিয়ে আসে তীক্ষ্ণ দুটো বিষ দাঁত। সেটা সে ভ্যাম্পায়ার যুবকের হাতে বসিয়ে দেয় আর সেখানে ঢেলে দেয় তীব্র বিষ।
কিন্তু একটু পরেই ভ্যাম্পায়ার যুবক আবার নিজেকে মুক্ত করে নেয়। দুইজনের মধ্যে কেউ কাউকে ছাড় দিতে রাজি নয়। আবার কেউ কারো থেকে কমও নয়। দুইজন যেনো দুইজনের মৃত্যুর পণ করে যুদ্ধে নেমেছে।
এইদিকে সামিয়া আর আয়ান দূরে দাঁড়িয়ে দেখে যাচ্ছে সব কিছু। আয়ান বুঝতে পারলো তাদের এখন হয় পালাতে হবে আর না হলে এদের দুইজনের মধ্যে কাউকে হারাতে সাহায্য করতে হবে। আর যাকে সাহায্য করবে তার থেকেই রহস্য জেনে নিবে।
কিন্তু তারা সাহায্য করবে কি করে? আর সাহায্য করলে কাকেই বা করবে।
আয়ান সামিয়াকে বিষয়টা জানালো। সামিয়া একটু ভেবে বললো নাগ মানে ওই সর্পমানবকে সাহায্য করতে। কারণ ভ্যাম্পায়ার সামিয়াকে ধরে নিয়ে যেতে এসেছিল কিন্তু সর্পমানব তাকে আটকিয়ে দিয়েছে। তাই লজিক দিয়ে চিন্তা করলে সর্পমানব ভালো। কিন্তু সে যেহেতু অতিমানব তাহলে তারও কিছু স্বার্থ আছে নিশ্চয়। কিন্ত এতসব ভাবার সময় নেই।
আয়ান আগে থেকেই সতর্ক ছিল। সে ভ্যাম্পায়ার সম্পর্কে পড়ালেখা করেছে একটু একটু। তাই তাদের দুর্বলতা কি সেটাও জানে আয়ান। তাই সে তার পকেট থেকে দুটো রসুনের মালা বের করলো। একটা সামিয়ার হাতে দিয়ে আরেকটা নিজের কাছে রাখলো আর হাতে জড়িয়ে নিলো। এইবার সে তার বুক পকেট থেকে একটা ছোট্ট পানির শিশি বের করলো আর আরেকটা পকেট থেকে একটা কাঠের গাজাল বের করে বাগানের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো যেখানে যুদ্ধ হচ্ছিল।
সেই সময় ভ্যাম্পায়ারটা সর্পমানব থেকে কিছুটা দূরে মাটিতেই অবস্থান করছিলো পুনরায় আক্রমণ করার জন্য।
কিন্তু সেই সুযোগ আর সে পেলোনা।
আয়ান পিছন থেকে গিয়ে তার রসুনের মালা ছুড়ে দিলো ভ্যাম্পায়ার যুবকের দিকে। ভ্যাম্পায়াররা রসুন বা তার গন্ধ সহ্য করতে পারেনা। এটা তাদের একটা দুর্বলতা। তাই এই ভ্যাম্পায়ার যুবকও সেটি সহ্য করতে না পেরে তার ভয়ঙ্কর রূপ ছেড়ে মানব রূপে চলে আসে। আর ঠিক সেই সময়েই আয়ান সেই পানির শিশির মুখ খুলে সবটুকু পানি ঢেলে দেয় তার গায়ে।
যেখানে যেখানে পানির ফোটা পড়ছিল সেখানে চামড়া ঝলসে যেতে থাকে ভ্যাম্পায়ার যুবকের। আয়ান আর দেরি না করে তার মুখোমুখি চলে যায়। আর হাতের কাঠের গজালটা সোজা ভ্যাম্পায়ার যুবকের হ্ৎপিন্ড বরাবর বসিয়ে দেয়।
সাথে সাথে ভ্যাম্পায়ার যুবকের শরীর পুড়ে ছাই হয়ে উড়ে যায়।

এইদিকে দূরে দাঁড়িয়ে সর্পমানব সব কিছু দেখে যাচ্ছিলো। হঠাৎ করে তার নজর যায় সামিয়ার দিকে। সে সামিয়াকে ধরার জন্য তার দিকে এগিয়ে যায় চুপিচুপি। সামিয়া কিছুই বুঝতে পারেনা। যেই সেটা সামিয়াকে লেজ দিয়ে পেচিয়ে ধরে সাথে সাথে সর্পমানব তার ঘাড়ের পিছনে কিছু অনুভব করে। ধীরে ধীরে তার চোখ জোড়া বন্ধ হয়ে আসে। ঘাড়ে হাত দিয়ে সে একটা বস্তু পায়। সামনে এনে দেখে একটা সূচালো জিনিস। আর তার থেকে একটু দূরে হাতে পিস্তল নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেই যুবক যে একটু আগে মহা শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার প্রিন্স কে শেষ করে দিয়েছে।
চোখ বন্ধ হয়ে আসে সর্পমানবের। সামিয়াকে ছেড়ে দিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পরে সেটি।

ধীরে ধীরে চোখ মেলে তাকায় সর্পমানব। বুঝতে পারে সে বেঁচে আছে। কিন্তু সে এই মুহূর্তে কোথায় আছে তা বুঝতে পারছে না। মুখ দিয়ে জিহ্বা বের করে ঘ্রাণ নেওয়ার চেষ্টা করে। সাপের একটা বৈশিষ্ট্যের মধ্যে একটা হলো তারা জিহ্বা দিয়ে ঘ্রাণ নেয়, আর সেটা অনেক প্রখর। কিন্তু এইবারও সে ব্যর্থ হয়। কারণ তার মুখ বাধা ছিল। সে শুধু অনুভব করতে পারে সে কিছু একটার মধ্যে বন্দি অবস্থায় রয়েছে। আর তার হাত, পা, লেজ, চোখ, মুখ সব বাধা রয়েছে।
একটু পর কারো গলার আওয়াজে সেদিকে কান দেয় সে। একটা মেয়ে আর একটা ছেলের আওয়াজ ভেসে আসছিল।
তারা বলছিল,
- "আয়ান, তুমি আমার সাথে এমন কেনো করেছিলে?"
-"তোমার সাথে এমন না করলে তুমি ভাবতে আমি তো আছিই আর নিজকে ছেড়ে দিতে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তোমার সাথে এমন করলে তুমি নিজেকে শান্ত করতে পারবে আর বিপদের সময় শক্ত হতে পারবে। কিন্তু তুমি সুইসাইড করতে চাইলে। আমি এইসব কিছু দেখতে পারছিলাম। কারণ আমার নজর ছিল তোমার বাড়ির উপর। আর তোমার জানালা থেকে একটু দূরে একটা গাছের সাথে আমি সিসিটিভি ক্যামেরা সেট করে রেখে দিয়েছি। যার ফলে আমি স্পষ্ট দেখে পাই। আর ছুটে চলে আসি তোমার কাছে। কিন্তু এখানে আসার আগে আমি আরো কিছু দেখতে পাই। সেটা হলো এই সর্পমানব আর দূরে একটা বাদুর তোমার উপর নজর রাখছে। আমি বুঝতে পারি বাদুরটা হলো ভ্যাম্পায়ার। আর আমি তোমার সাথে নিরাপদ থাকার জন্য ভ্যাম্পায়ারদের দুর্বলতা সম্পর্কে আগেই জেনে নিয়েছিলাম। তাই সেই সব জিনিস নিয়ে হাজির হয়ে যাই তোমার বাসায়। কিন্তু ততক্ষণে ওরা দুইজন যুদ্ধ শুরু করে দিয়েছে। যেহেতু আমি নাগ বা সাপের দুর্বলতা সম্পর্কে কিছু জানতাম না তাই একটা অজ্ঞান করার ডাং নিয়ে যাই। যেটা পরে কাজে দেয়।"
-"তুমি আমার জন্য এতকিছু কেনো করেছো?"
-"সেই উত্তরটা আমার কাছেও নেই।"
-"কিন্তু আমার কাছে প্রশ্ন থেকেই যায়। আমিও তো ভ্যাম্পায়ার।তাহলে ওই রসুন তো আমিও ধরে ছিলাম। আমার কিছু হলোনা কেনো তাহলে? আর সেই পানি কিসের ছিল।"
-" সেটা পবিত্র এক্সিরিজমের পানি ছিল। যেটা ভ্যাম্পায়ারদের সবচেয়ে বড় দুর্বলতা। কিন্তু রসুনের ব্যাপারটা তো আমার মাথাতেও আসছে না।"

এরপর কিছুক্ষণ নীরবতা। সর্পমানব বুঝতে পারলো তারা চিন্তা করছে। কিন্তু তাদের চিন্তা আর প্রশ্নের জবাব সর্পমানবের জানা। সে মুখ বাধা সত্ত্বেও বারবার কথা বলার চেষ্টা করলো।

সামিয়া আর আয়ান বুঝতে পারলো সর্পমানবের জ্ঞান ফিরেছে। তাই তারা তাকে বন্ধ করে রাখা ঘরের দিকে গেলো আর গিয়ে শুধু তার মুখ খুলে দিলো।
সাথে সাথে সর্পমানব......

Picked up.
চলবে...........

তো কি বুঝলেন? আর আয়ান কে ভ্যাম্পায়ার বা নাগ মনে করা পাঠকদের জন্য রইলো এক বালতি সমবেদনা😁
এখন ভাবাভাবি করে মস্তিষ্কের উপর চাপ না দিয়ে অপেক্ষা করুন। কারণ বুঝতেই পারছেন, যা ভাববেন তা উল্টে যাবে।

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আলগী নদী!

সাথী হারা

"রহস্যে ঘেরা"পর্ব-০৪