রহস্যে ঘেরা-পর্ব-২

রহস্যে ঘেরা

পর্ব: 02

এরা তারাই ছিল যারা সামিয়াকে কলেজে ফলো করেছিলো। সামিয়া অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে, আর সেই বখাটের দল তার দিকে লোভতুর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
তারা শুধু অপেক্ষা করছে সেই দেহ ভোগ করার জন্য।
তারা একটা জঙ্গলের সামনে এসে দাঁড়ায়। সামিয়াকে গাড়ি থেকে নামিয়ে নিয়ে যায় জঙ্গলের গভীরে।



মিটমিট করে চোখ মেলে তাকায় সামিয়া। সে বুঝতে পারছেনা সে কোথায় আছে। তার শুধু এইটুকু মনে আছে কলেজ শেষে সে বাড়ি ফেরার জন্য সে গাড়ি পর্যন্ত গিয়েছিলো। কিন্তু পরে আর তার কিছু মনে নেই। সামিয়া নিজেকে তার ঘরে আবিষ্কার করে। কিন্তু সে এখানে কি করে এলো তার কোন ধারণা নেই।
সামিয়ার মাথাও ঝিম হয়ে আছে, চোখ ব্যাথা করছে। তাই সে নিজের ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। চোখে মুখে ঠান্ডা পানির ঝাঁপটা দিতেই সে ঠিক হয়ে যায়।
সামিয়া নিচে চলে যায়, কারণ তার ক্ষুধা লেগেছে খুব।
সামিয়াকে উপর থেকে আসতে দেখে তার মা অবাক হয়ে যায়। কারণ তিনি সামিয়াকে বাড়িতে ঢুকতে দেখেনি। তিনি সামিয়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
-"মা, তুই কখন ফিরলি? আর দরজা তো ভিতর থেকে বন্ধ করা, তাহলে তুই ঘরে প্রবেশ করলি কি করে?"
-"আমি যখন এসেছি তখন দরজা তো খোলাই ছিল, আর আমি বেশ কিছু আগে এসে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম।"
ইচ্ছে করেই মিথ্যে বললো সামিয়া। কারণ যদি মাকে বলে সে নিজেও জানেনা তাহলে তার মা রেগে যাবে।
আসলে সামিয়া নিজেও জানেনা তার সাথে ঠিক কী হয়েছিল।
সামিয়া টিভি চালু করে দেয়।
একটা খবর দেখে শিউরে ওঠে সে।
তাদের কলেজ থেকে একটু দূরে জঙ্গলের ভিতরে পাওয়া গিয়েছে বেশ কয়েকটা লাশ। সামিয়া চিনতে পারে তাদের। এদের ভিতর একজন কে সামিয়া থাপ্পড় মেরেছিল, আর বাকিরাও সামিয়ার পিছু নিয়েছিলো।
আর এখন তারা সবাই মৃত।
খবরে আরো বলা হচ্ছিল,
"যারা মারা গেছে, তাদের শরীর ছিল মাত্রাতিরিক্ত নীল। এর অর্থ হলো কোনও তীব্র বিষের প্রভাবে এরা প্রত্যেকে প্রাণ হারিয়েছে। আর মৃতদের শরীরের একেক জায়গায় সাপের কামড়ের দাগ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। কিন্তু এতো বিষাক্ত সাপ বাংলাদেশে নেই। তাহলে এটা দুর্ঘটনা না খুন তা বোঝা মুশকিল।"

সামিয়া এইসব দেখে টিভি বন্ধ করে দিলো।
মায়ের থেকে খাবার নিয়ে সে খেয়ে নেয়। বাড়িতে তার তেমন কোন কাজ নেই। তাই একটা গল্পের বই নিয়ে বসে পড়ে।

এইদিকে পানির গভীরে কোন একটা গোপন জায়গায় কিছু অর্ধ মানব আর অর্ধ সাপ রুপি প্রাণী গুলো আলোচনা করছে।
তাদের আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হলো সামিয়া। সেই লোকগুলোর সবার চোখ ছিল গাঢ় বাদামী আর কালো।
আর দেহের পেট থেকে নিচের অংশ সাপের মতো, আর উপরের অংশ মানুষের মতো।
সেই সময় একটা যুবক বলে ওঠে,
-"মহারাজ, সে তার রূপে ধীরে ধীরে আবর্তিত হচ্ছে। আজকে আমি নিজ চোখে তার সেই হিংস্র রূপ দেখেছি, তার বিষের প্রভাব আমি নিজে পরীক্ষা করেছি। আর কিছুদিন পরেই সে তার সত্তা কে নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম হবে।"

দূর থেকে আওয়াজ ভেসে আসলো,
-"যতদিন এমনটা না হচ্ছে ততদিন নজর রাখো তার উপর।"
নির্দেশ মান্য করে সেই যুবক সাথে সাথে স্থান পরিত্যাগ করলো।
যুবকটি নিজের দেহ মানুষের মত করে পানির নিচ থেকে উপরে উঠে মানব সমাজের দিকে রওনা দিলো।

-"দেখুন পুলিশ অফিসার, আমার মেয়ের এই ঘটনার সাথে কোন হাত নেই। আর আপনার মনে হয় জানা নেই আমি কে।"
-"মিস্টার খান, আমি আপনাকে খুব ভালো করে চিনি। আপনার হাত কতদূর সেটাও জানি। কিন্তু এই কেসে যারা খুন হয়েছে বা দুর্ঘটনার শিকার হয়েছে তারাও অনেক প্রভাবশালী ছিল। যার কারণে উপর থেকে আমাদের উপর চাপ দেওয়া হচ্ছে।"
-"কিন্তু আমার মেয়ে আপনাদের কি করে সাহায্য করবে, আর আমাদের ফ্যামিলি রেপুটেশন কথায় যাবে চিন্তা করতে পারছেন আপনি?"
-"যারা মারা গেছে তারা আপনার মেয়েকে কিডন্যাপ করেছিলো, তাদের উদ্দেশ্য খারাপ ছিল, কিন্তু কি হলো, তারা সবাই মারা গেলো আর আপনার মেয়ে দিব্যি সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরে এসেছে। আর আপনার মেয়েকে যে ওরা তুলে নিয়ে গিয়েছিলো তা অনেকে দেখেছে। আপনার ফ্যামিলি রেপুটেশন নষ্ট হবে এইটুকু আমি গ্যারান্টি দিতে পারি।"

এতক্ষণ পুলিশ ইন্সপেক্টর আর সামিয়ার বাবা সকালের ঘটনা নিয়ে কথা বলছিল। অনেক বুঝানোর পর সামিয়ার বাবা ইন্সপেক্টরকে সামিয়ার সাথে দেখা করার পারমিশন দেয়।
ইন্সপেক্টর সোজা সামিয়ার ঘরে গিয়ে তার সামনে বসে পড়ে। আর তাকে বলে,
-"দেখো মা, আমি সব জানি তুমি আমাদের শুধু সত্যি সত্যি বলে দাও ঠিক কী হয়েছিল? বিশ্বাস করো তোমার কোন ক্ষতি হবে না।"
সামিয়া কথা না বাড়িয়ে সরাসরি বলতে শুরু করে দেয়,
-"কলেজে ওরা সবাই আমার পিছু নিয়েছিলো, আর একজন আমাকে প্রোপজ করে বসে। আমি তাকে থাপ্পড় মেরে দেই।
এরপর যখন আমি ক্লাস শেষে বাড়ি ফেরার জন্য গাড়ির কাছে যাই তারপর কি হয়েছে আমার আর মনে নেই। যখন চোখ মেলে তাকাই তখন নিজেকে আমার ঘরে আবিষ্কার করি।"
ইন্সপেক্টর সামিয়ার কথা বিশ্বাস করলো। বিশ্বাসযোগ্য না হলেও সামিয়া যা যা বলেছে সব সত্যি, আর সামিয়ার চোখের ভাব, কথা বলার সময় শরীরের ভাব ভঙ্গি বলে দিচ্ছে সামিয়া সত্য বলছে।
ইন্সপেক্টর মাথা দোলাতে দোলাতে চলে গেলো। তার মাথায় কিছুই ঢুকছে না যে সে কি করে এই কেস সমাধান করবে।

এইদিকে রাত হয়ে গেছে। খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পড়েছে সামিয়া। কিন্তু হঠাৎ করে তার ঘুম আবার ভেঙে যায়। হঠাৎ করে নয়, এইবার সে দেখেছে এক ভয়ানক স্বপ্ন। সে স্বপ্নে দেখে কিছু ছেলে একটা মেয়েকে কিডন্যাপ করে কোথাও নিয়ে যাচ্ছে।
তারা যখন একটা জায়গায় গিয়ে মেয়েটাকে রেখে দেয় আর এক এক করে তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার প্রস্তুতি নেয় তখনই হঠাৎ করে চোখ মেলে তাকায় সেই মেয়ে। মেয়েটার চোখ দুটো ছিল কুচকুচে কালো। ধীরে ধীরে মেয়েটার মুখে ফুটে ওঠে এক হিংস্রতা। চেহারা পরিবর্তন হয়ে যায় মেয়েটির। মুখ দিয়ে একটু পরপর বেরিয়ে আসছিল সরু জিহ্বা। শরীরের চামড়া হয়ে যেতে থাকে খসখসে। মেয়েটির এইরকম পরিবর্তন দেখে ভয় পেয়ে যায় সেই সব ছেলেরা।
যেই তারা পালাতে যাবে তখনই মেয়েটির নাক দিয়ে বের হয়ে আসে এক প্রকার বিষাক্ত নিঃশ্বাস। সেটা এতটা বিষাক্ত ছিল যে মুহূর্তের মধ্যেই সেইসব ছেলেরা নিজ নিজ জায়গায় জ্ঞান হারিয়ে পরে যায়।
ধীরে ধীরে মেয়েটার পায়ের অংশ একত্র হয়ে সাপের মতো হয়ে যায়। চোখে যেনো ছিল এক প্রতিশোধের নেশা। সেই অবস্থাতেই তার মুখের দুপাশ দিয়ে বেরিয়ে আসে দুটো চিকন তীক্ষ্ণ লম্বা দাঁত।
মানবী রুপি সেই সাপ কে ডাকা হয়ে থেকে নাগিন। সেই নাগিন এগিয়ে যায় সেই সব ছেলেদের কাছে, আর তাদের দেহের বিভিন্ন অংশে বসিয়ে দের তার বিষাক্ত দাঁত, আর মুহূর্তের মধ্যেই তীব্র বিষের প্রভাবে নীল হয়ে ওঠে একেক জনের শরীর।

এইটুকু দেখার পরেই সামিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। সামিয়া এইটুকু দেখে তেমন ভয় পেতো না। কিন্তু যখন সে দেখলো ওই সর্পমানবীর চেহারার সাথে তার হুবহু মিল তখনই সে ভয় পায়।
সামিয়া বুঝতে পারছে না তার সাথে সব কি হচ্ছে। বাইশ বছরের জীবনটা সে এখনো ভালো ভাবে কাটাতে পারেনি। সব সময় তার সাথে কিছু না কিছু হয়েই থাকে। কিন্তু সামিয়া বুঝতে পারেনা তার সাথে কি হচ্ছে। বিছানায় বসে থেকেই ডুকরে কেঁদে ওঠে সামিয়া। কিন্তু সেই কান্নার শব্দ বাহির পর্যন্ত পৌছানোর নয়।
এমন সময় সামিয়ার পিপাসা পায়। প্রচণ্ড পিপাসা। বিছানার পাশে থাকা গ্লাস থেকে সব টুকু পানি শেষ করে দেওয়ার পরেও তার পিপাসা যায় না। পাশেই পানির জগ থেকেও সব পানি খেয়ে নেয় সে। কিন্তু এতে যেনো তার পিপাসা আরো বেড়ে যায়। ধীরে ধীরে সামিয়ার চোখ লাল হয়ে যেতে থাকে।
অন্য সময় এমন পরিস্থিতি হলে সামিয়া ঘুমিয়ে পড়তো। কিন্তু এই স্বপ্নের পর সামিয়ার কিছুতেই ঘুম আসার নয়।
সামিয়া বুঝতে পারে তার শরীরের ভিতর এক অন্য রকম অনুভূতি হচ্ছে। যা তাকে নিয়ন্ত্রণের বাহিরে নিয়ে যাচ্ছে।
সামিয়া অনেক চেষ্টা করে ঠিক থাকার। কিন্তু সে পারেনা। বিছানার চাদর খামছে ধরে। এরপর আর তার কিছু মনে নেই।

সকালে আ্যলার্মের শব্দে চোখ মেলে তাকায় সামিয়া। এখন সে স্বাভাবিক। বরং অন্য দিনের চেয়ে তাকে ভালো লাগছে আজ।
মন মেজাজ সব ভালো আছে। কিন্তু কালকের কথা মনে পড়তেই গভীর চিন্তায় ডুবে যায় সে। সে জানে না তার সাথে কি হয়েছিলো। আর এখন সে ঠিক আছে কি করে?
কিন্তু সে আর এইসব ভাবতে চায়না। তার জীবনকে সে মেনে নিয়েছে। আর তার বাবা মাও মেয়ের এই অভিশাপ নিয়ে চিন্তিত হলেও ধীরে ধীরে মানিয়ে নিতে শিখছে।
এমন সময় সামিয়া বাহিরে আ্যম্বুলেন্সের শব্দ শুনতে পেলো।
কি কারণে সেটা এইদিকে আসছে তার কোন ধারণা নেই।
সামিয়া নিচে নেমে গেলো।
সেখানে গিয়ে দেখে তাদের বাড়ির কাজের লোক দুইজন গল্প করছে।
তাদের গল্পের কিছু কথা শুনে চমকে ওঠে সে।
কারণ তাদের কথার মর্মার্থ এই যে,
"সামিয়াদের বাড়ি থেকে কিছু দূরেই পাওয়া গিয়েছে একজনের রক্ত শূন্য লাশ।"


Picked up.
চলবে........


রহস্যের মধ্যে একটু ডুবে থাকুন না। কি ভাবছেন সামিয়া আসলে কি? তাহলে আপনার ভাবনা সঠিক। অপেক্ষা করুন পরবর্তী পর্বের জন্য। নতুন টুইস্ট আনার দায়িত্ব আমার।...ধন্যবাদ

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আলগী নদী!

"রহস্যে ঘেরা"পর্ব-০৪

"রহস্যে ঘেরা " পর্ব-৫