"রহস্যে ঘেরা " পর্ব-৫
রহস্যে ঘেরা
পর্ব: 05
আয়ান সামিয়ার থেকে তার কিছু চুল আর তার বাবার কিছু চুল সংগ্রহ করে নেয়। এরপর সেগুলো সে ল্যাবে পরীক্ষার জন্য পাঠিয়ে দেয়। আয়ান এখন যা যা করছে তার প্রতিটা পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভেবে চিন্তে নিচ্ছে। কারণ সে আন্দাজ করতে পেরেছে, সামিয়ার এইসব অলৌকিক কর্মকাণ্ডের পিছনে অন্য কারো হাত রয়েছে।
নাগ রাজ্যের রাজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটা যুবক। সে নাগ রাজের উদ্দেশ্যে বলতে শুরু করে,
-"মহারাজ! ভ্যাম্পায়াররা সামিয়াকে রক্তের প্রতি আকৃষ্ট করে দিয়েছে। এখন প্রায় রাতেই সনিয়া রক্তের পিছু ছোটে। কালকেও সেই অবস্থায় আমি তাকে উদ্ধার করে তার বাড়িতে দিয়ে এসেছিলাম। আর তার বাকি তিন বান্ধবী যারা সামিয়া কে দেখেছে তাদেরকে আমি নিজে আমার বিষ দিয়ে শেষ করে এসেছি। কিন্তু এখন আমাদের সামিয়াকে রক্ত থেকে দূরে রাখতে হবে।"
যুবকের কথা শুনে রাজা চিন্তায় পড়ে গেলো। কারণ যদি সামিয়া শুধু ভ্যাম্পায়ার সত্তার অধিকারী হয়ে যায় আর ভ্যাম্পায়ারদের সাথে কাজ করে তবে এই দুনিয়ায় সবচেয়ে শক্তিশালী হবে ভ্যাম্পায়ার সাম্রাজ্য। আর ভ্যাম্পায়ার রাজ সামিয়াকে দিয়ে নাগ রাজ্য ধ্বংস করে দিবে। কিন্তু সামিয়া যদি উভয় সত্তার অধিকারী আর তার পূর্ন সত্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয় তবে উভয় রাজ্যের বিপদ। কিন্তু ততদিন পর্যন্ত কিছু হবে না যতদিন পর্যন্ত সামিয়া এটা জানছে যে সে আসলে কে? কী তার পরিচয়? আর ভ্যাম্পায়ার এবং নাগ রাজ্যের সাথে কিসের শত্রুতা তার?
এইসব প্রশ্নের উত্তর যদি সামিয়া জানতে না পারে তাহলে কিছুই হবে না। কিন্তু পূর্ণ শক্তি অর্জন করার পর সামিয়া অবশ্যই এইসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চাইবে। আর তার ক্ষমতা বলে হয়তো জেনেও যাবে। তখন কারো নিস্তার থাকবে না।
নাগ রাজ তখন যুবককে আদেশ দেয়, দিন রাত সামিয়ার সাথে লেগে থাকার জন্য। আর সামিয়ার পিছু যেনো সে কখনো না ছাড়ে। আদেশ মান্য করে সেই যুবক চলে যায়।
এরপর নাগ রাজ তার বসা জায়গা থেকে উঠে সামনের দিকে এগিয়ে তার নিজ কক্ষের একটা গোপন জায়গায় ঢুকে পড়ে।
সেখানে তার সামনে রয়েছে একটা একটা যুবকের ছবি। নাগ রাজ সেই ছবিতে হাত বুলিয়ে দিয়ে চোখের পানি ফেলে দিয়ে বললো,
-"সেদিন যদি আমি একটু নরম হতাম তাহলে আজ আর এই দিন দেখতে হতো না।"
এইদিকে আয়ানের হাতে রয়েছে ডিএনএ রিপোর্ট। সেখানে স্পষ্ট প্রমাণ আছে যে সামিয়া যাদের বাবা মা মনে করে তারা আসলে সামিয়ার কেউ নয়। কিন্তু এটা কি করে সম্ভব সেটাই ভাবিয়ে তুলছে আয়ানকে। সে কিছুতেই কিছু বুঝতে পারছে না যে সে এই সংবাদ সামিয়াকে কি করে দেবে। কিন্তু সব রহস্যের সমাধান করতে হলে এটা যে তাকে যেকোনো ভাবে হোক করতেই হবে।
আয়ান ঠিক করে ফেলেছে। সে আজই সামিয়াকে সব বলে দিবে। আর তারপর যা করার সামিয়া করবে।
আয়ান সরাসরি তার কাছে চলে যায়। আর তাকে সব খুলে পড়ে। আয়ান ভেবেছিল সামিয়া এইসব শুনে প্রচণ্ড ভাবে ভেঙে পড়বে। কিন্তু তা হলো না। সামিয়ার মুখ দিয়ে শুধু একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে গেলো। আর সে বললো,
-"ছোট থেকেই আমি বুঝতে পারতাম আমি সবার থেকে আলাদা। কিন্তু আমার বাবা মা সবার মতই স্বাভাবিক। তাই তখন থেকেই আমার সন্দেহ ছিল তারাই আমার বাবা মা কিনা। আর আজ সেটা ক্লিয়ার হয়ে গেলো।"
-"কিন্তু তারা যদি তোমার আসল মা বাবা না হয় তাহলে তারা কারা? তারা কি জানে তুমি তাদের আসল সন্তান নয়? আর তুমিই তাহলে কে?"
বললো আয়ান।
সামিয়া বললো,
-"এই বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। শুধু এইটুকু জানি যে আমার বাবা মা আমাকে প্রচণ্ড ভালোবাসে। তাই ছোট থেকে এখন পর্যন্ত আমার গায়ে একটা আচর ও লাগতে দেয়নি। সব সময়েm তারা আমাকে আগলে রেখেছে। এমনকি যখন আমার প্রথম বিয়ের রাতে আমার স্বামী মারা গেলো তখনও কেউ যেনো আমায় কোন কথা না শোনাতে পারে সেই জন্য অনেক কিছু করেছে। আর আমাকে নিয়ে কেউ কিছু বলার যাতে সুযোগ না পায় তাই আবার আমার বিয়ের ব্যবস্থা করেছে। অনেকেই আমাকে বিয়ে করতে চাইতো না আমার এই ঘটনার জন্য। কিন্তু আমার রূপের আগুন আর আমার বাবার অর্থের লোভে হেরে যায় তাদের ইগো। তাই খুব তাড়াতাড়িই আমার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু ফলাফল একই। মারা যায় আমার স্বামী।"
আয়ান বললো,
-"আমি যতটুকু বুঝতে পারছি সেটা যদি ঠিক হয় তাহলে তুমিই এইসব খুন করেছো।"
-"না আমি এইসব করিনি। যদি আমি এইসব করতাম তাহলে আমার সাথে বা আমার ভিতরে আমি অস্বাভাবিক অনুভব করতাম। যেমন আমার তৃষ্ণা পাওয়া, আর চোখ লাল হয়ে যাওয়া। কিন্তু এইসবের কিছুই হয়নি আমার সাথে। আর আমি প্রতি বিয়ের রাতেই আমার জানালার ধারে একটা কালো ছায়া দেখতে পাই। যেটা আমি তাকানোর সাথে সাথে আবার উড়ে যায়।"
সবটা শুনে চমকে উঠলো আয়ান। সে কোনদিন কি ভাবতে পেরেছিলো যে সে একটা ভ্যাম্পায়ারের সামনে দাঁড়িয়ে সামনা সামনি দাঁড়িয়ে কথা বলবে? না কোনদিন নয়। একটা সাধারণ মানুষের কল্পনার বাহিরে এটা। আয়ান কেনো সামিয়ার কথা শুনছে বা তাকে সাহায্য করছে তা তার অজানা। এখন আয়ানের সামনে আরো একটা প্রশ্ন দাঁড়িয়ে গেছে। সেটা হলো,
সামিয়া তার স্বামীদের খুন না করলে অন্য কে করেছে? আর জানালার ধারে দেখা সেই ছায়াটাই বা কার?
আয়ানের সমানে প্রশ্নের পাহাড়। আর তার সামনে রাস্তা দুটো।
প্রথমত সে সামিয়াকে তার অবস্থায় ছেড়ে দিয়ে নিজে নিরাপদ থাকতে পারে। আর দ্বিতীয়ত নিজের জীবনের ঝুকি নিয়ে সে সামিয়াকে সাহায্য করতে পারে।
কিন্তু আয়ানের হাতে আরেকটা পথ খোলা আছে। এই দুটো রাস্তার মাঝামাঝি চলা।
আয়ান হঠাৎ করে সামিয়াকে বলে ওঠে,
-"সামিয়া! আমি আর তোমাকে সাহায্য করতে পারছি না। তোমাকে সাহায্য করতে গিয়ে আমার কি হয়ে যায় সেটা তো আর আমি জানিনা। যদি কোনোভাবে আমার ক্ষতি হয়ে যায় সেটা আমি মেনে নিতে পারবো না। তাই এখন থেকে তুমি তোমার মতো আর আমি আমার মত।"
হঠাৎ করে আয়ানের মুখে এইরকম কথা শুনে সামিয়ার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। সবে গড়তে শুরু করা একটা ভরসা যেনো মুহূর্তের মধ্যেই ভেঙে যায়। তার চোখের পানি যেনো বাঁধ ভেঙে আসে। নিঃশব্দে টপটপ করে মাটিতে পড়ে সেগুলো।
আয়ানের দিকে আবার সে প্রশ্নবিদ্ধ নয়নে তাকায়। কিন্তু আয়ানের স্বার্থপর চোখ দেখে সে দমে যায়। তার আর কিছুই বলার থাকে না।
সে তার বাড়িতে চলে যায়।
এতক্ষণ তারা বাহিরে একটা জায়গায় কথা বলছিল। এখন আর সেখানে দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন সামিয়া বোধ করেনি।
আয়ান সামিয়ার এই অবস্থা দেখে শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে তার কাজে চলে গেলো। কারণ এখন তাকে অনেক কাজ করতে হবে।
এইদিকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে রাজা খুব রেগে আছে তার ছেলের উপরে। কারণ সামিয়া যখন তার বান্ধবীদের রক্ত পান করতে এগিয়ে যাচ্ছিলো তখন নাগ পুত্র তাকে বাধা দিয়ে সামিয়ার বাড়িতে দিয়ে আসে। কিন্তু ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের প্রিন্স চার্লি তখন কি যেনো কাজে ছিল তাই সে নাগ পুত্র কে বাধা দিতে পারেনি। আর যার কারণে রেগে আছে ভ্যাম্পায়ার রাজ।
-"তুমি সেই সময় কোথায় ছিলে?"
-"আমার একটা জরুরী কাজ ছিল। যার কারণে আমি সেই সময়ে সেখানে উপস্থিত হতে পারিনি।"
-"ভ্যাম্পায়ার রাজ্যকে বাঁচানোর থেকে আর কি জরুরী কাজ থাকতে পারে তোমার?"
-"ক্ষমা করবেন পিতা। আমার ভুল হয়েছে। এইরকম আর হবে না।"
-"ভূল যখন করেছো তার শাস্তি তোমায় পেতেই হবে। তুমি আজকে রাতেই সামিয়াকে এখানে নিয়ে আসবে। আর এটা আমার আদেশ।"
-"কিন্তু পিতা!"
-"আমি জানি তাকে এখানে আনলে আমাদের বিপদ বাড়তে পারে। কিন্ত পৃথিবীতে থাকলে নাগরা তাকে নানা ভাবে বাঁচাতে থাকবে, বা তাকে বশে আনার চেষ্টা করবে। আমি সেটা হতে দিতে পারিনা। তাই যতোই বিপজ্জনক হোক না কেনো, তাকে এখানে নিয়ে আসতে হবেই।"
ভ্যাম্পায়ার রাজ তার পুত্রকে শেষ পর্যন্ত আদেশ দিয়েই দিলো সামিয়াকে তুলে আনার জন্য। কিন্তু সামিয়াকে যদি তুলে আনা হয় তাহলে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের অনেক গোপন ইতিহাস জেনে যাওয়া সম্ভব তার পক্ষে। আর সেটা যদি সামিয়া জেনে যায় তাহলে কারোর রক্ষা নেই। সেই জন্য চার্লি তার বাবা কে সাবধান করেছিলো। কিন্তু তার বাবা সেটা শোনেনি। তাই তার এখন সামিয়াকে তুলে আনা ছাড়া আর কোন উপায় নেই।
সে যতো দ্রুত পারে রওনা হয়ে গেলো পৃথিবীর উদ্দেশ্যে। সময় তার হাতে কম। আর বাধা রয়েছে নাগ পুত্র। সামিয়াকে তুলে আনতে গিয়ে নাগ পুত্রের সাথে লড়াইও হয়ে যেতে পারে সেটা চার্লি জানে। তাই সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে তাকে।
এইদিকে সামিয়া তার ঘরে শুয়ে আছে। মন তার প্রচণ্ড খারাপ। একটা ভালোলাগা কাজ করছিলো তার আয়ানের প্রতি। কিন্তু তার ভাগ্য যে তার সাথে নেই। যেই কারণে আয়ানকে সে হারিয়ে ফেলেছে। সামিয়ার নিজ জীবনের প্রতি তার একটা ঘৃণা এসে গেছে। তাই সে ঠিক করেছে এই জীবন আর সে রাখবেনা।
হাত বাড়িয়ে একটা ছুরি নিয়ে যেই অন্য হাতের উপর চালাতে যাবে ঠিক তখনই...
Picked up.
চলবে.........
খারাপ লাগলো তাইনা। চলবে শব্দটা আমারো খুব খারাপ লাগে। কিন্তু কি আর করবো। আপনাদের রহস্যের মধ্যে ফেলে দিতে ভালো লাগে। এখন কথা হলো কি সেই রহস্য যার কারণে সামিয়া এতো শক্তিশালী আর এইরকম ক্ষমতার অধিকারী?
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন