" জিতু " একটি গ্রামের নাম
"জিতু " একটি গ্রামের নাম
জৈষ্ঠ্য মাসের শেষের দিক প্রচন্ড গরম পড়েছে । কোথাও একটু বাতাস নেই ।
গাছের পাতাগুলোও নড়ছে না । খেলা শেষে জিতু যখন বাড়ি ফিরলো তখন সন্ধ্যা প্রায় ঘনিয়ে এসেছে ।
বাড়ি ফিরতেই জিতুর দাদু চেচিঁয়ে বলল,"কিরে গরুগুলো ক্ষেত থেকে এনেছিস ?
"ভুলেই গিয়েছিলাম দাদু ।
এখনই যাচ্ছি , বলে দৌঁড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল জিতু ।
জিতু আর ওর দাদু মিলে ছোট সংসার ওদের । ছোটবেলাতে মা বাবাকে হারায় জিতু । তারপর থেকে দাদুর সাথেই থাকে ও ।
জিতুর কথা শুনে মুচকি হেসে ওর দাদু বলল,"পাগল ছেলে একটা ।"
অন্ধকার নেমেছে চারদিকে । একটা কালো বিড়াল আঙ্গিনায় বসে মিউ মিউ করছে ।
জিতুর দাদু হ্যারিকেন জ্বালিয়ে লাঠি দিয়ে তাড়া করলো বিড়ালটাকে । একটু দূরে গিয়ে কালো বিড়ালটা ফকফকে সাদা বিড়ালে রূপান্তরিত হয়ে গেল ।
খুব অবাক হল জিতুর দাদু । সাত পাঁচ না ভেবেই বিড়ালটার পিছনে ছুটলেন তিনি । বিড়ালটা দৌঁড়ে বাঁশঝাড়ের দিকে চলে গেল ।
মোট ছয়টা বাঁশঝাড় একসাথে এখানে । বিড়ালটার প্রতি অদ্ভুত আকর্ষণে তিনি বিড়ালটার সাথে বাঁশঝাড় গুলোর মাঝখানে চলে আসলেন ।
বিড়ালটা স্থির হয়ে দাড়িঁয়ে গেল । এতক্ষণে যেন বোধ ফিরে আসলো জিতুর দাদুর ।
কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গেছে । ধীরে ধীরে সাদা বিড়াল কালো আর কুৎসিত আর ভয়ংকর রূপ ধারণ করলো ।
পৈশাচিক হাসি ফুটে উঠলো ভয়ংকর চেহারাতে । তীক্ষ্ন দাঁত বেয়ে লালা ঝরতে লাগলো । ভয়ে চিৎকার দিয়ে উঠলো জিতুর দাদু । কিন্তু একটুও শব্দ বের হল না । প্রাণীটা দুই হাতে গলা চেপে ধরলো তার ।
এদিকে জিতু গরু নিয়ে বাড়ি ফিরে এসে দেখলো ওর দাদু সাদা কাপড় পড়ে উঠানে বসে আছে ।
একটু অবাক হয়ে জিতু জিজ্ঞাসা করলো,"এই রাতের বেলা সাদা কাপড় পড়ে বসে আছো কেন দাদু ?
"আমি আমার বোনের বাড়িতে যাবো", বলেই হাটঁতে শুরু করলেন তিনি ।
একটুপর আবার পিছনে ফিরে তাকিয়ে অদ্ভুত ভারী কন্ঠে বললেন,"কালো বিড়াল থেকে সাবধানে থাকিস !!"
জিতু ঘাড় নাড়লো । ওর দাদু চলে গেল । জিতু ঘরে ঢুকে বিছানায় শুয়ে ভাবলো দাদু কালো বিড়ালের কথা কেন বলল !!
রাত গভীর হল ।
জিতু গভীর ঘুমে হারিয়ে গেল ।
পরদিন সকালে চিৎকার চেচাঁমিচি শুনে ঘুম ভাঙ্গলো জিতুর ।
ঘুম থেকে উঠে বাহিরে এসে দেখলো ওর দাদুর মৃতদেহ পড়ে আছে উঠানে ।
আর তার চারপাশে গ্রামের মানুষজন জড়ো হয়ে আছে । জিতু কিছুই বুঝতে পারলো না ।
রতন দৌঁড়ে এসে বলল,"সকালে বাঁশঝাড়ের দিকে গিয়ে দেখি তোর দাদুর লাশ পড়ে আছে । গলায় আঙ্গুলের লাল লাল ছাপ ।"
জিতু কিছু বলল না ; বাকরুদ্ধ হয়ে পড়লো । ওর চোখ বেয়ে পানি পড়তে লাগলো ।
দুপুরের আগেই দাফন কাফন সম্পন্ন করা হল ওর দাদুর ।
বটগাছের গোড়ায় বসে কান্না করছে জিতু । ও কিছুতেই ভাবতে পারছে না ওর দাদু নেই ।
আর সবচেয়ে বেশি যেটা ভাবছে সেটা হল ওর দাদু মারা গেল কি করে সেটাই মাথায় ঢুকছে না ।
ওর মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে শুধু দাদুর শেষ কথাটা - কালো বিড়াল থেকে সাবধানে থাকিস ।
দুপুর গড়িয়ে বিকাল হল । আস্তে আস্তে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসলো গ্রামে ।
রতন মাছ ধরে বাঁশঝাড়ের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো । হঠাৎ ও শুনতে পেল কে যেন বাঁশঝাড়ের ভিতর থেকে করুণ কন্ঠে বাঁশি বাজাচ্ছে ।
একটু অবাক হল ও । এই সাঝেঁর বেলায় কে বাঁশি বাজাচ্ছে এখানে !! বাঁশঝাড়ের ভিতর ঢুকলো ও ।
তখনই শোঁ শোঁ বাতাস বইতে লাগলো । প্রচন্ড বাতাসে বাঁশ গুলো একটা আর একটার সাথে জোরশব্দে সংঘর্ষিত হতে লাগলো ।
হঠাৎ ও দেখলো বাঁশঝাড়ের একপাশে লাল টকটকে দুটো চোখ দেখা যাচ্ছে ।
ও ছুটে পালাতে চাইলো । কিন্তু এক পাও নড়তে পারলো না ।
আরো স্পষ্ট হতে লাগলো চোখ দুটো । একটু পরই হিংস্র আর বিকৃত চেহারার কেউ একজন ওর সামনে এসে দাড়াঁলো ।
ভয়ে ওর গায়ের সব লোম দাড়িঁয়ে গেল । ওর চিৎকার করতে চাইছে , ছুটে পালাতে চাইছে কিন্তু কিছুই পারছে না ।
অদ্ভুত কোন শক্তি যেন ওকে আটকে রাখছে ।
পরদিন সকালে রতনের লাশ পাওয়া গেল বাঁশঝাড়ে ।
ওর গলাতেও ছিল লাল লাল আঙ্গুলের ছাপ ।
.
.
.
.একটি গ্রামের কথা।
পর্ব :১
Picked up.
চলবে............
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন