"রহস্যে ঘেরা" পর্ব-৩
রহস্যে ঘেরা
পর্ব: 03
"রক্ত শূণ্য লাশ" কথাটা বারবার সামিয়ার মাথায় বাজতে থাকে। কিন্তু কিছুই সে বুঝতে পারেনা। সে শুধু জানে এতদিন তার বিয়ের বাসর রাতেই তার নিজ স্বামীর রক্ত শূন্য দেহ পাওয়া যেতো। কিন্তু এখন যে বাড়ির পাশেই পাওয়া গেলো সেইরকম লাশ। তবে কি এইসবের পিছনেও সামিয়ার হাত আছে।
না, সামিয়া আর ভাবতে পারছে না। সে মনে মনে নিজেকে সান্ত্বনা দেয় এইসবের পিছনে তার কোনও হাত নেই।
সামিয়া নিজেকে শান্ত করে। কিন্তু মাথা থেকে তার চিন্তা যায় না।
সেই অবস্থাতেই সে কলেজ চলে যায়। অন্তত সেখানে গেলে যদি তার চিন্তাটা একটু হলেও কমে সেই আশায়।
কলেজে পৌঁছে সামিয়া সোজা ক্লাসে ঢুকে পড়ে। ক্লাস ততক্ষণে শুরু হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু প্রফেসর সামিয়াকে ঢুকতে দেয় সেখানে।
সামিয়া এতক্ষণ খেয়াল করেনি যে প্রফেসর একটা নতুন ছেলের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিচ্ছে। ছেলেটা পিছনের দিকে ঘুরে ছিল বলে সামিয়া সেটা লক্ষ করেনি।
যেই ছেলেটা সামনের দিকে তাকালো তখনই সামিয়া হারিয়ে গেলো একটা ঘোরের ভিতরে। শুধু সে নয়, ক্লাসের সবাই তাকিয়ে থাকলো তার দিকে। বিশেষ করে মেয়েরা।
কারণ ছেলেটা কোন সাধারণ ছেলে নয়। মেয়েদের পরীদের সাথে তুলনা করা হয়। কিন্তু ছেলেদের তুলনা করার জন্য তেমন বিশেষ কিছু নেই।
ফর্সা রঙের, সুঠাম দেহের অধিকারী ছেলেটা যেমন সুদর্শন ছিল তেমনি তার গোলাপি ঠোঁট আর চোখের মণি ছিল ঘায়েল করার মতো।
সেই ঠোঁটে মিষ্টি একটা হাসি ফুটিয়ে তুললো সে।
সামিয়ার যেনো চোখের পলক পড়ছে না। কারণ জীবনে সে কোন ছেলের দিকে এইরকম ভাবে তাকিয়ে দেখেনি। আর কোন ছেলেকে তার পছন্দও হয়নি আজ পর্যন্ত। কিন্তু এই ছেলেটা কে দেখে সামিয়ার কি মনে হলো তা সে নিজেও জানে না।
প্রফেসর পরিচয় করে দিলো। সামিয়া সেখান থেকে ছেলেটার সব কিছু জানতে পারলো। ছেলেটার নাম আয়ান। কলেজে নতুন আর সামিয়াদের সেম ব্যাচের।
সামিয়া মনে মনে খুশি হলো। কিন্তু সে জানে তার ভাগ্য কতটা খারাপ। তাই সে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করলো।
এইসবের মাঝে সে রাতের ঘটনা ভুলেই গিয়েছিলো প্রায়।
কিন্তু কিছু ছাত্র ছাত্রীদের কানাঘষা তার কানে যায়। তার বিয়ের রাতেই স্বামী মারা যায়, এইসব সহ আরো অনেক কিছু। যেই কারণে সামিয়ার কোন বন্ধু নেই। সামিয়া এইসব বিষয় শুনলে প্রচুর কষ্ট পায়।
তাই সে কলেজের পিছনে চলে যায়। সেখানে তেমন কেউ যায়না। সামিয়া সেখানে গিয়ে কান্না করতে শুরু করে দেয়। তার সেই সুন্দর চোখ দিয়ে বের হতে থাকে অশ্রুধারা।
বেশ কিছুক্ষণ পর হঠাৎ করে একটা মিষ্টি কন্ঠ শুনতে পায় সে। সেই মিষ্টি কন্ঠে কেউ বলছিল,
-"আপনি কি ঠিক আছেন?"
সামিয়া অবাক হয়ে পিছনে তাকায়। কিন্তু পিছনে তাকিয়ে বিব্রত হয়ে পড়ে। কারণ ক্লাসের সেই ছেলেটা যার নাম আয়ান সে এখন তার সামনে দাঁড়িয়ে। আর সেই সামিয়াকে প্রশ্নটা করেছে।
সামিয়া জানেনা সে কি উত্তর দিবে। কিন্তু তার চোখ দিয়ে পানি পরেই যাচ্ছিলো। ছেলেটা তার পকেট থেকে রুমাল বের করে সামিয়ার দিকে বাড়িয়ে দেয় আর চোখ মুছে নিতে বলে।
সামিয়া ইতস্তত করে রুমাল দিয়ে চোখ মুছে নেয়। কিন্তু সে আবারো ভেঙে পড়ে। কারণটা তার অজানা। হয়তো অপরিচিত কেউ তাকে সেই নজরে দেখবে যেই নজরে বাকিরা তাকে দেখে সেই ভয়ে!
সামিয়া বুঝতে পারে বড্ড বোকামি হয়ে যাচ্ছে। তাই সে যতো দ্রুত পারে নিজেকে সামলে নেয়, আর কাঁপা ঠোঁটে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বলে সে ঠিক আছে, আর সেই ছেলেটাকে একটা ধন্যবাদ দেয়।
কিন্তু ছেলেটা বুঝতে পারে সামিয়া মিথ্যা বলছে। তাই সে সামিয়া কে জিজ্ঞেস করে। কিন্তু সামিয়া বলে,
-"কলেজে নতুন এসেছেন, তাই জানেন না। আস্তে আস্তে আমার ব্যাপারে সব জেনে যাবেন। আর আমার নাম সামিয়া।"
কথাটা বলেই সামিয়া আয়ানের পাশ কাটিয়ে চলে যায়।
আয়ানের মুখের ভাব দেখে মনে হলো সে এইসবের কিছুই বুঝতে পারেনি।
সামিয়া আর দেরি না করে সোজা তার গাড়িতে গিয়ে উঠে বসে, আর ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট করে দেয়। গাড়ি চলতে থাকে তার নিজ গতিতে।
ঘন একটা জঙ্গলের মধ্যে, মাটির নিচে রয়েছে আস্ত একটা রাজত্ব। নাম তার ভ্যাম্পায়ার কিংডম। শুধু ভ্যাম্পায়ারদের রাজত্ব চলে সেখানে। মানুষের কোন জায়গা নেই সেই রাজ্যে। আর এখন পর্যন্ত কোন মানুষ সেই রাজ্য খুঁজেও পায়নি।
কারণ জায়গাটা অনেক গোপনীয়।
একটা বড় প্রাসাদের ভিতরে কথা বলছে দুইজন ভ্যাম্পায়ার।
-"মানুষের রাজ্যে তোমার কোন সমস্যা হয়নি তো?"
-"আরে না বাবা, আমার কেন সমস্যা হবে। আমি হলাম রাজবংশের ভ্যাম্পায়ার। আলো আমাদের কিছু করতে পারেনা। আর আমি আমার পূর্ণ সত্তা লাভ করেছি। যার ফলে এখন আমার কোন সমস্যা হবে না। এতদিন শুধু রাতের বেলা বের হতে পারতাম আমি। কিন্তু এইবার দিন রাত সমান তালে ঘুরতে পারবো।"
-"কিন্তু সাবধান! ওই নাগদের বাচ্চারা কিন্তু ওর ওপর নজর রাখছে। তোকে যেনো ভুলেও ওরা ভ্যাম্পায়ার বলে চিনতে না পারে।"
-"ওদের জায়গা মাটিতে, আর আমাদের শক্তি আকাশ পর্যন্ত। ওরা থাকে পানিতে। আর আমরা থাকি মাটির নিচে। ওদের সাথে আমাদের পার্থক্য আকাশ পাতালের। কিন্তু তাও আমাদের শক্তির সীমা এক। সামিয়া একাই দুই সত্তার অধিকারী। সে যদি তার সত্তা কে নিয়ন্ত্রন করা শিখে যায় তাহলে সে চাইলেই আমাদের দুই জাতিকে নিমেষেই শেষ করে দিতে পারবে। কিন্তু তার শক্তিকে যদি আমরা ব্যবহার করি তাহলে আমাদের আর কাউকে ভয় পেয়ে চলতে হবে না।"
-"এখন তুই আমাদের ভরসা। দেখ সামিয়াকে আমাদের সাথে আনতে পারিস কিনা? আর যদি তা না হয় তাহলে সুযোগ বুঝে মেরে দিবি ওকে।"
-" ওর পূর্ণ সত্তার প্রতি নিয়ন্ত্রণ আসার আগেই ওকে আমাদের সাথে আনতে হবে। আর যদি তা না হয় তাহলে নিয়ন্ত্রণ আসার আগেই মেরে ফেলতে হবে। তা না হলে তাকে ধ্বংস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে। আর সবচেয়ে বড় বাধা হলো ওই নাগেরা। তারাও যথাসাধ্য চেষ্টা করবে সামিয়াকে যেনো আমরা মারতে না পারি।"
-"আমাদের যা করতে হবে বুঝে শুনে করতে হবে।"
ভ্যাম্পায়ার দুইজন আর কেউ নয়। সেই রাজ্যের রাজা আর তার ছেলে। রাজ বংশের ভ্যাম্পায়ারদের একটা বিশেষ গুণ আছে। আর তা হলো, একটা নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত সূর্যের আলোতে তারা যেতে পারেনা। কিন্তু যখন সেই বংশের ভ্যাম্পায়াররা তাদের পূর্ন সত্তা লাভ করে তখন তারা সূর্যের আলোতে অনায়াসে যেতে পারে। কিন্তু তাদের পূর্ণ শক্তি ব্যবহার করতে পারেনা।
সামিয়া বাড়িতে এসে একটা গোসল দিয়ে শুয়ে পড়ে। কারণ তাকে নিজেকে সান্ত্বনা দিতে হবে। সে আর পরের দুইদিন কলেজ যায়নি। কারণ সে ওই ছেলেটার মুখোমুখি হতে পারবে না। সামিয়া সব কিছুর একটা সমাধান চায়। সে চায় তার জীবন বাকি মেয়েদের মত স্বাভাবিক হোক। কিন্তু সে জানেনা সে কোন দিন স্বাভাবিক হতে পারবে না। এমনকি সে এও জানেনা তার জীবনে কি বিপদ আসতে চলেছে।
এইদিকে পানির নিচের নাগ রাজ্যে চলছে সামিয়াকে নিয়ে আলোচনা। তারা বুঝতে পেরেছে ভ্যাম্পায়ারাও সামিয়ার ওপরে নজর রাখা শুরু করে দিয়েছে। তাই এখন তাদের কেও সতর্ক হতে হবে। কিন্তু তারা জানে যদি ভ্যাম্পায়াররা সামিয়াকে ধীরে ধীরে মানুষের রক্তের প্রতি আসক্ত করে দেয় তাহলে সামিয়ার ভিতরে নাগ সত্তা ধীরে ধীরে লোপ পাবে। এতে করে আসল ক্ষতিটা হবে নাগ রাজ্যের।
নাগদের শক্তি হচ্ছে নাগ মণি। কিন্তু সামিয়া আধা নাগ, আধা ভ্যাম্পায়ার। তাই তার নাগ মণি প্রকট হবেনা কোনোদিন। কিন্তু সামিয়ার শক্তি, তেজ, আর বিষের প্রভাব সাধারণ নাগদের থেকে হাজার গুন বেশি। তার কারণ জানতে হলে ঘাটতে হবে বিশাল ইতিহাস।
সামিয়া এখন অনেকটাই ঠিক হয়ে গেছে। আর এই দুইদিন তার সাথে কোন অস্বাভাবিক ঘটনাও ঘটেনি।
সামিয়ার কাছে আয়ানের দেওয়া সেই রুমালটা এখনও রয়েই গেছে। সেইদিন জলদি জলদি চলে আসার সময় সেটা আর ফেরত দেওয়া হয়ে ওঠেনি। তাই সামিয়া আজ ঠিক করেছে সে কলেজ যাবে আর আয়ানকে তার রুমাল দিয়ে সেই দিনের জন্য ক্ষমা চেয়ে নিবে।
সামিয়া কলেজে গিয়ে আয়ানকে খুঁজতে শুরু করে দেয়। কিন্তু কথাও খুঁজে পায়না। এক সময় সে আয়ানকে দেখতে পায় একটা গাছের নিচে বসে আছে। সামিয়া সোজা সেখানে চলে যায় আর পিছন থেকে তাকে ডাক দিয়ে রুমালটা দিয়ে দেয়। সামিয়া সেদিনের ব্যবহারের জন্য ক্ষমাও চেয়ে নেয়। আয়ান এইসব দেখে বলে,
-"এইসবের কোন প্রয়োজন নেই। আর আপনার ঘটনা আমি শুনেছি। মনে রাখবেন এইসবের জন্য আপনি দায়ী নয়। হতে পারে সেইসব ছিল নিছক দুর্ঘটনা বা অন্য কিছু। আপনি তো জানেন আপনি নির্দোষ। তাহলে এতো চিন্তার কি আছে?"
সামিয়া কিছু বললো না। এইসব শুনে আবার তার চোখ দিয়ে পানি পড়া শুরু হলো। সে আর সেখানে থাকার প্রয়োজন বোধ করলো না। চলে গেলো।
আয়ানও তার পিছু নিলো এই ভয়ে যে সামিয়া উল্টা পাল্টা কিছু করে।
এইদিকে আয়ানের সাথে সামিয়ার কথা বলা আর সামিয়ার পিছনে যাওয়া দেখে রাগে ফুসতে থাকে সেই কলেজের কয়েকজন মেয়ে। তারা অনেক চেষ্টা করছে আয়ানকে কাছে পাওয়ার জন্য। কিন্তু আয়ান তাদের কাউকে পাত্তা দেয়না। কিন্তু সামিয়ার সাথে তারা আয়ানকে সহ্য করতে পারছে না একদমই। তাই তারা ঠিক করে সামিয়াকে একটা উচিত শিক্ষা দিবে।
Picked up.
চলবে..........
মনে হয় আজকের পর্বে অনেক কিছুই বুঝতে পেরেছেন।
আর আমার মনে হয় গল্পটা আমি ভালো মতো সাজাতে পারছিনা। এইরকম গল্প ফার্স্ট টাইম তো তাই। আশা করি আপনারা সব সময় পাশে থাকবেন।
মন্তব্যসমূহ
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন