" রহস্যে ঘেরাquot; পর্ব-০৮

রহস্যে ঘেরা

পর্ব: ০৮

সামিয়ার শরীর ধীরে ধীরে পাল্টাতে শুরু করে দিলো। আয়ান বুঝতে পারলো এই সময় সামিয়ার সামনে থাকা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়। তাই সে সামিয়ার থেকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু ততক্ষণ অনেক দেরি হয়ে গেছে। সামিয়া তার নগিন সত্তা নিয়ে ফেলেছে। তার বিশাল লেজ দিয়ে তৎক্ষণাৎ সে আয়ানকে ধরে তার মুখের সামনে নিয়ে আসে।



আয়ান বুঝতে পারে সামিয়া নিজ নিয়ন্ত্রনে নেই। এখন তার মৃত্যু নিশ্চিত। সে অনেক ভাবে সামিয়াকে বুঝাতে থাকে। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়না। ঠিক সেই সময় সামিয়া তার বিষ দাঁত বের করে আর যেই আয়ানকে সে কামড় দিতে যাবে তখনই তার শরীর কাপুনি দিয়ে ওঠে। হঠাৎ করে সামিয়া তার মাথা হাত দিয়ে চেপে ধরে, আর চিৎকার দিয়ে ওঠে।
আয়ান সেই সুযোগ বুঝে নিজেকে মুক্ত করে নেয়। সে বুঝতে পেরেছে সামিয়া ধীরে ধীরে নিজেকে কন্ট্রোলে আনতে পারছে। তাই সে দূর থেকে চিৎকার করে সামিয়াকে তার আসল নাম, পরিচয় মনে করিয়ে দিতে থাকে।
তার এইসব কথায় কাজ হচ্ছিল। ধীরে ধীরে সামিয়া আবার সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে যায়। মুখে তার একটা হাসি ফুটে ওঠে।
আয়ান বুঝে যায় সামিয়া এখন নিজের উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে সক্ষম হয়েছে। তাই সে তার কাছে যায়।
এখন সামিয়া তার নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত। সে তার হাত, পায়ের জায়গার লেজ, মুখ, দাঁত, চামড়া খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখছে।
সামিয়ার সুবিধার্থে আয়ান একটা আয়না জোগাড় করে তাকে ধরিয়ে দেয়। আয়ান এখনো একটু একটু ভয়ে আছে। কারন তার সামনে বিশাল রূপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একটা আস্ত নাগিন। যে কিনা একটু আগেই তাকে মারতে চেয়েছিলো।
সামিয়া মনে মনে একটু খুশি হয় যে সে নিজেকে নিয়ন্ত্রণে আনতে পেরেছে। তাই সে এদিক সেদিক হেঁটে হেঁটে দেখে। তার লেজ নাড়িয়ে দেখে। আবার নিজের সরু জিহ্বাও বের করে পর্যবেক্ষণ করে।
হঠাৎ করে সামিয়ার মনে পড়ে যায় সে আয়ানকে মারতে চেয়েছিলো। তাই সে আগে তার কাছে ক্ষমা চেয়ে নেয়।
আয়ান সামিয়া কে জিজ্ঞেস করে,
-"এখন কেমন লাগছে তোমার?"
-"অনেক ভালো লাগছে। নিজের ভিতর একটা আলাদা শক্তি অনুভব করতে পারছি আমি।"
-"এই অবস্থায় যদি বাহিরে বের হও তাহলে পুলিশ তোমায় ধরে ল্যাবে পাঠিয়ে দিবে পরীক্ষা নিরীক্ষা করার জন্য।"
এটা বলার পর আয়ান আর সামিয়া উভয়ই হেসে ওঠে এক সাথে।
এইবার সামিয়াকে তার মানব রূপে আসতে হবে। কিন্তু সে কিছুতেই পারছিল সেই অবস্থায় ফিরে যেতে। তাই আয়ান তাকে শান্ত হতে বলে। আর নিজের প্রতি বিশ্বাস রেখে ধীরে ধীরে নিজেকে মানুষ হিসেবে কল্পনা করতে বলে। সামিয়াও তাই করতে থাকে। আর এক পর্যায়ে সে আবার তার নিজের পুরাতন রূপে চলে আসে।
সামিয়া অনেক খুশি হয়। কিন্তু আয়ান কিছু নিয়ে চিন্তিত। তার চিন্তার কারণ হলো সামুদ বলেছিলো বিপদ আসতে চলেছে। কিন্তু কি সেই বিপদ সেটা কারো জানা নেই। কিন্তু এখন তারা অনেকটাই নিশ্চিত। কারণ সামিয়া তার নাগিন সত্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে পেরেছে। কিন্তু পুরোপুরি ভাবে এখনো না। তাও সুরক্ষার জন্য একটাই অনেক।

এইদিকে ভ্যাম্পায়ার রাজ্যে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। কারণ তাদের ছোট প্রিন্স চার্লি ধ্বংস হয়ে গেছে। আর একটা মানবের হাতে একটা ভ্যাম্পায়ারের ধ্বংস এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। তাই পুরো ভ্যাম্পায়ার রাজ্য আজ স্তব্ধ।
এইদিকে রাজা সেই যুবকের উপর প্রচণ্ড ক্ষেপে আছে যে তার ছোট পুত্রকে হত্যা করেছে। তার রক্ত দিয়ে গোসল না করলে যেনো রাজার শান্তি নেই। এইদিকে সামিয়ার যদি তার আসল সত্তার উপর নিয়ন্ত্রন আনতে সক্ষম হয় তাহলেও বিপদ বাড়বে বই কমবে না।
হঠাৎ করে করো পায়ের ভারী আওয়াজ শোনা গেলো। বিশাল দেহ নিয়ে রাজার কক্ষে প্রবেশ করলো এরিক। রাজার বড় পুত্র সে। ভবিষ্যৎ রাজা আর বর্তমানে সবচেয়ে শক্তিশালী ভ্যাম্পায়ার এরিক একাই এই দুনিয়ায় আছে। তার সামনে শো খানেক ভ্যাম্পায়ার নস্যি।
সে তার ছোট ভাইয়ের মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছেনা। তাই সে তার ভাইয়ের হত্যাকারীকে নিজ হাতে মৃত্যু দিতে চায় আর সেটা এই ভ্যাম্পায়ার রাজ্যের সকলের সামনে।
এরিক তার বাবার কাছে অনুমতি চাইলো পৃথিবীতে যাওয়ার জন্য। কিন্তু তার বাবা তাকে ভেবে চিন্তে কাজ করতে বললো। কিন্ত এরিক কারো কথা কোনদিন শোনেনি। তাই সে এবারও শুনল না। পা বাড়ালো পৃথিবীর উদ্দেশ্যে।

নাগ রাজ্যেরও একই অবস্থা। তাদের রাজ্যের একজন সেনাপতি ছিল সামুদ। তাকে হারিয়ে পুরো রাজ্য শোকাহত। কিন্তু তারা জানে এইসবের জন্য দায়ী সেই যুবক যে তাদের সেনাপতিকে বন্দি করে রেখেছিলো। বিভিন্ন উপায়ে তারা এইসব কিছু জানতে পেরেছে। এখন সামিয়ার উপর ভ্যাম্পায়ার আর সর্প দুনিয়ার কারো নজরদারি নেই। কিন্তু সব রাজ্যে চলছে একটা গোপন ষড়যন্ত্র। আর সেটা হলো ওই মানব যুবককে খতম করে দেওয়া।

সামিয়া আর আয়ান এখন আবার সেই গোডাউনে দাঁড়িয়ে আছে। সামিয়াকে এই দুপুর রাতে আয়ান ডেকে এনেছে এখানে। তার কারণ সে চায় সামিয়া যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব তার সত্তার উপর নিয়ন্ত্রণ আনতে শিখে যায়।
ঘুম ঘুম চোখে সামিয়া আয়ানের দিকে তাকায়। তখনই আয়ান এক বালতি পানি তার দিকে ছুড়ে দেয়। নিমেষেই সব ঘুম দূর হয়ে যায় সামিয়ার। একটা রাগী ভাব চলে আসে তার মধ্যে। এমনিতেই কয়েকদিন ধরে রক্তের নেশা চেপে ধরেছে তাকে। এইবার তাই সে সুযোগ পেয়েছে। চোখ জোড়া লাল হয়ে যেতে শুরু করে দেয় তার। আর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসতে থাকে দুটো বড় হয়ে যাওয়া দাঁত। হাতের নখ বড় বড় হয়ে যায়। সাথে পিঠ দিয়ে বেরিয়ে আসে দুটো ডানা।
আশ্চর্যজনক ভাবে আয়ান এবারেও কোন নিরাপত্তা গ্রহণ করেনি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে যেনো প্রস্তুত। কিন্তু তার কোন প্রস্তুতি নেই। সামিয়া তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে একবার আয়ানের দিকে তাকালো। তারপর ডানা মেলে উড়ে গেলো তার দিকে। খপ করে আয়ানকে ধরে তার ঘাড়ে দাঁত বসিয়ে দিলো সে।
কিন্তু মজার বিষয় আয়ানের কিছুই হলো না। সামিয়া দেখলো
আয়ান তার ঘাড়ে লোহার আস্তরন দিয়ে রেখেছে।
আয়ান মুচকি হেসে সামিয়ার সামনে একটা আয়না ধরলো আর তার চেহারা দেখালো। এরপর সে সামিয়াকে সামিয়ার মানব রূপের কয়েকটা ছবি দেখালো। এরপর তার বাবা মায়ের। বেশ খানিকক্ষণ সব কিছু দেখার পর আর আয়ানের হৃদয়স্পর্শী কিছু কথা শুনে সামিয়ার শরীর কেঁপে উঠলো। মাথা ঘুরে উড়তে থাকা অবস্থায় সে মাটিতে পড়ে গেলো।
আয়ান বুঝতে পারলো ডোজে কাজ হয়েছে। এখন যার জ্ঞান ফিরবে সে হলো সামিয়া।
বেশ কিছুক্ষণ পর আয়ানের ধারণা কে সত্য প্রমাণ করে দিয়ে উঠে দাঁড়ালো সামিয়া। সাথে মুখে একটু মিষ্টি হাসি। দাঁত দুটো তার বের হয়েই ছিল। এই রূপেও যেনো সামিয়া কে অসম্ভব সুন্দরী লাগছিল।
সামিয়া হাসি মুখে আয়ানকে আবারো ধন্যবাদ আর দুঃখিত জানালো।
ঠিক সেই সময় হঠাৎ করে কথা থেকে যেনো হাজার হাজার সাপ গোডাউনের ভিতরে প্রবেশ করলো। তারা দুইজন কিছুই বুঝতে পারলো না। আয়ান সামিয়াকে বললো তাকে নিয়ে উড়ে যেতে। সামিয়াও তাই করলো। তার পাখা মেলে আয়ানকে শক্ত করে ধরে সে আকাশ পানে উড়াল দিলো। কিন্তু একটা বিষয় তাদের কাছে পরিষ্কার নয় সেটা হলো এত সাপ একসাথে সেখানে কি করছিলো। কিন্তু তাদের ধারণা হলো ওইসব সাপ হয়তো সে নাগ সামুদের জন্য এসেছিল। কিন্তু তারা জানেনা সেগুলো আয়ানকে মারতে এসেছিল। সামিয়া থাকায় আয়ান বেঁচে যায়।
আকাশে একটা মেয়ে একটা ছেলেকে নিয়ে উড়ে যাচ্ছে এইরকম দৃশ্য সচরাচর দেখা যায়না। আয়ান উপভোগ করছিলো বিষয়টা। কিন্তু তারা জানত না দূর থেকে কিছু একটা তাদের উপর লক্ষ্য রাখছে।
আকাশ পথেও তাদের রক্ষা হলো না শেষ পর্যন্ত। হঠাৎ করে কথা থেকে যেনো উড়ে আসে বিশাল দেহের একটা ভ্যাম্পায়ার। সামিয়াকে জোরে ধাক্কা দেয় সে। সাথে সাথে সামিয়া তাল সামলাতে না পেরে পরে যেতে থাকে। ততক্ষণে তার হাত থেকে ফসকে গেছে আয়ান। সে মাটিতে পড়ার আগেই সেই বিশাল ভ্যাম্পায়ার ধরে ফেলে আয়ানকে, আর তার সাথে করে নিয়ে অদৃশ্য হয়ে যায়।
এইদিকে সামিয়া তাল সামলাতে না পেরে পরে যায় মাটিতে।
কিন্তু তার কিছুই হয়না। সে যখন আবার উঠে দাঁড়িয়ে উড়তে যাবে তখনই সেই হাজার হাজার সাপ ঘিরে ধরে তাকে। সামিয়া বুঝতে পারে এদের সাথে এখন লড়াই করা ঠিক হবেনা। তাই সে ধরা দেয় তাদের হাতে। কিন্তু সে কি করে শান্ত হলো যখন একটা ভ্যাম্পায়ার আয়ানকে ধরে নিয়ে গেলো?
সামিয়া বুঝতে পারলো এটা সেই ভ্যাম্পায়ারের কেউ হবে যাকে
আয়ান মেরে ফেলেছে। সামিয়া এও বুঝতে পারলো আয়ানের মৃত্যু নিশ্চিত। চোখ দিয়ে তার পানি ঝড়তে শুরু করে দিলো। কারণ সব দোষ তার। আজ তার জন্যই আয়ান মৃত্যুর মুখে অথবা এতক্ষণে মারাও গেছে।
তাই সে আশা ছেড়ে দিলো আর ওই সাপদের হাতে বন্দি হয়ে তাদের সাথে চললো।

 Picked up.
চলবে.........

মন্তব্যসমূহ

এই ব্লগটি থেকে জনপ্রিয় পোস্টগুলি

শৈশবের স্মৃতি বিজড়িত আলগী নদী!

সাথী হারা

"রহস্যে ঘেরা"পর্ব-০৪